সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
গত কয়েক মাস ধরেই একের পর এক অভিযোগের শিকার হয়ে আসছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিতে সাইবার হামলার অভিযোগ করেছেন।
অস্ট্রেলিয়া সফরকালে তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক গুপ্তচর সংস্থা জিআরইউর এপিটি২৮ নামের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুনে জার্মানির সরকারি জোটের প্রধান শরিক দল এসপিডির সদর দপ্তরে সাইবার হামলা চালিয়েছে। এর আগে বুধবার ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ডয়চে ভেলে।
বেয়ারবক বলেছেন, রাশিয়ার সরকারি হ্যাকাররা জার্মানির সাইবারস্পেসে যে হামলা চালিয়েছে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর পরিণতি ভালো হবে না। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই বছরের শুরুর দিকেই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ই-মেইলে আড়িপাতার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে এসপিডি (জার্মানির শক্তিশালী রাজনৈতিক দল) অভিযোগ করেছিল। মাইক্রোসফট কোম্পানির সফটওয়্যারে সে সময়ে অজানা নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতার কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। রাশিয়া এভাবে ঠিক কত গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে তদন্তের ফল প্রকাশ করে বেয়ারবক রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএর সূত্র অনুযায়ী, জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক প্রতিরোধমূলক গোয়েন্দা সংস্থাও সেই তদন্তে অংশ নিয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, ইউরোপজুড়ে এক সার্বিক সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির আওতায় জার্মানির এসপিডি দলকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার হামলার অভিযোগ এটিই প্রথম নয়। দেশটির এপিটি২৮ ইউনিটের বিরুদ্ধে অতীতেও এমন অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালে জার্মানির সংসদের নিন্মকক্ষ বুন্ডেসটাগের ওপরেও সেই গোষ্ঠী সাইবার হামলা চালিয়েছিল বলে সন্দেহ করা হয়। ‘ফ্যান্সি বেয়ার’ নামেও পরিচিত এপিটি২৮ ইউনিট ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক দলের ওপরেও সাইবার হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সামরিক জোট ন্যাটোও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেড়ে চলা রুশ সাইবার হামলা সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে। তবে সে বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য প্রকাশ করেনি।
এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে দাবি করেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করতে শ্বাসরোধী রাসায়নিক ক্লোরোপিক্রিন ব্যবহার করছে ক্রেমলিন।
এর মধ্য দিয়ে রাসায়নিক অস্ত্র চুক্তি সিডব্লিউসি লঙ্ঘন করেছে মস্কো। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিয়ে নিজ দেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির লঙ্ঘন হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি রাশিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পেসকভ আরও বলেছেন, ‘সব সময়ের মতো তাদের এবারের অভিযোগও পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’
কোনো অভিযোগের তোয়াক্কা না করে নিজ গতিতেই চলছে রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলা-পালটা হামলা আর এসব অভিযোগের মধ্য দিয়েই আফ্রিকার দেশ নাইজারের মার্কিন ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনারা। শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, রুশ সেনারা মার্কিন সেনাদের সঙ্গে মেলামেশা করছেন না। তবে নাইজারের রাজধানী নিয়ামে ডিওরি হামানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত এয়ারবেস ১০১ এর একটি পৃথক হ্যাঙ্গার ব্যবহার করছেন তারা। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তারা কেন সেই ঘাঁটিতে প্রবেশ করেছেন তাও স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই পরিস্থিতি দুদেশের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বাড়িয়ে তুলবে।