হিজবুল্লাহকে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ দিয়ে আঘাত করছে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও তার অন্যান্য মিত্র দেশগুলো যুদ্ধবিরতি দেওয়ার আহ্বান জানালেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির সেনাবাহিনীকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন। খবর বিবিসির।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৯২ জন নিহত হয়েছে। গত সোমবার থেকে সেখানে হামলা বেড়ে যাওয়ায় আরও শতাধিক নিহত হয়েছে।

হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে যে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে একটি ভবনে বিমান হামলা হওয়ায় তাদের ড্রোন ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ সুরুর নিহত হয়েছেন। সোমবার থেকে দেশটিতে ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহ’র মাঝে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ’র মধ্যকার লড়াই ক্রমশ বাড়তে থাকায় গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মোট ১২টি দেশ লেবাননে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।

এই প্রস্তাবটি শুরুতে আশার আলো দেখিয়েছিল, যখন জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত ড্যানি ড্যানন বলেছিলেন যে তার দেশ যেকোনো প্রস্তাবের ব্যাপারে উদার মনোভাব পোষণ করে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মাঝে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদানের জন্য ওইদিন নিউ ইয়র্কে পৌঁছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল তার লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত লেবাননে অভিযান চালানো বন্ধ করবে না। “এর মাঝে একটি লক্ষ্য হল, দেশটির উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি নাগরিকদেরকে তাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনা।”

তবে নেতানিয়াহু’র ওই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দাবি সত্ত্বেও হোয়াইট হাউজ পরে বলেছে যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বিত করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার তার বক্তব্যে লেবাননে চলমান সংঘাত সমাধানের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তখন তা “কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।”

এক বছর আগে শুরু হওয়া গাজায় যুদ্ধের কারণে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বৈরিতা দেখা দেয়। তারপর দেশে প্রায় ৭০ হাজার ইসরায়েলি দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যূত হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, লেবাননে গত সোমবার থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আরও এক লাখ ১০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে ৫০টি রকেট এবং ৮০টি মিসাইল ছুড়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, বৃহস্পতিবার সারাদিন দক্ষিণ লেবানন এবং পূর্বাঞ্চলের বেকা উপত্যকায় হেজবুল্লাহ’র ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া সিরিয়া-লেবানন সীমান্তেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলছে, এই সীমান্তে হামলা চালানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, হিজবুল্লাহ’র জন্য অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করা।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি মিসাইল তারা প্রতিহত করেছে।

ইসরায়েল সেনাবাহিনীর প্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল হারজি হালেভি বুধবার বলেছেন, লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলা মাধ্যমে ‘শত্রুদের ভূমিতে’ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ঢোকার পথ তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল টমার বার সৈন্যদের তৈরি থাকতে বলেছেন যাতে করে স্থল অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করতে পারে।

এদিকে লেবাননে হামলা চালানো বন্ধ করার আহবান জানিয়েছে কাতার। দেশটির সরকারের মুখপাত্র মাজেদ-আল-আনসারি বলেছেন, লেবানন থেকে তারা ভয়াবহ তথ্য পাচ্ছেন। লেবাননে এমন ঘটনা ঘটছে যেখানে পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এ ধরণের নৃশংসতা গাজায় চালানো হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *