ফ্যাসিজম আমাদের সবার মধ্যেই কাজ করে: কুমিল্লায় ফরহাদ মজহার

জাতীয় রাজনীতি

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক


কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কোমাল্লা গ্রামে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফরহাদ মজহার।

৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের গণজমায়েত সম্পর্কে ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘আমি জানি না তাঁরা ওই দিন কী ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। তবে তাঁদের উদ্দেশে আমি বলব, রাষ্ট্র ও সরকার এক নয়। জনগণের সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ও সরকার এই দুটি বিষয় আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়, আমরা আশা করব ছাত্ররা আগামীকালের ঘোষণায় আমাদের কাছে এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করবেন।’

আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কোমাল্লা গ্রামে ‘গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সমাজ গঠন ও বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় এসব কথা বলেন করেন ফরহাদ মজহার। ওই গ্রামের বিলকিস আলম পাঠাগারের উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটি সমাজে বাস করব এই যে সিদ্ধান্ত নেওয়া—এখান থেকেই শুরু হয় রাজনীতি। তবে একটি ভালো সমাজ তৈরির চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না। মতের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু রাজনীতি মানে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব। আর আমরা যদি বলা শুরু করি “আমি যেটা বলছি সেটাই সহিহ, আমারটাই ঠিক, আমারটা না মানলে আমার সঙ্গে বাস করতে পারবা না”-এটার নাম হলো ফ্যাসিজম। ফ্যাসিজম একটি কঠিন শব্দ, কিন্তু ফ্যাসিজম আমাদের সবার মধ্যেই কাজ করে, আমারটাই শুনতে হবে, আমারটাই থাকতে হবে। ঠিকই তেমনই শেখ হাসিনা ও যাঁরা আওয়ামী লীগ করতেন, তাঁদের একটি অংশ বলা শুরু করেছিল, তাঁরা যেভাবে ইতিহাস লেখেন, সেভাবেই ইতিহাসের মহানায়ক ঠিক করতে হবে, পাঠ্যপুস্তক যারা পড়বে, কী পড়বে তারাই শুধু সেটা ঠিক করবে, তাদেরটাই শুধু ঠিক, আর সব ভুল—এভাবেই তারা ফ্যাসিজম তৈরি করেছিল। কোনো একক ব্যক্তি নয়, ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম যখন সমাজ চর্চা করে, তখন আর সমাজে ফ্যাসিবাদ থাকে না।’

ফরহাদ মজহার বলেন, দর্শন কথাটির সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। কীভাবে ভালো করে চিন্তা করব, সঠিক চিন্তা করব—এটাকে বলে দর্শন। তবে সবাই কিন্তু চিন্তা করতে পারে না। চর্চা ছাড়া চিন্তা হয় না, কারণ চিন্তা কিন্তু শেখানো যায় না। সবার মধ্যে চিন্তার চর্চা জাগ্রত করতে হবে। নতুন বাংলাদেশের চিন্তা দুর্দান্ত ব্যাপার বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ কাউকে নতুন করে ধর্ম শেখানোর চেষ্টা করবেন না। যে তরুণেরা গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের ধর্ম সম্পর্কে খুব ভালো জানেন। তরুণেরা বলেছেন “মুজিববাদ নিপাত হোক, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা।” এর মানে তরুণেরা বলতে চান “ধর্মের শিক্ষা আমাদেরকে দেবেন না আর।” তরুণের নৈতিকতা, সমাজ গঠন করা, নতুনভাবে বাংলাদেশকে গঠন করা—এই যে ব্যাপারটা এসে গেছে, এটি একটি দুর্দান্ত ব্যাপার।’

তরুণ প্রজন্মকে বেশি বেশি বই পড়ে, ইতিহাস জানার ওপর গুরুত্বারোপ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘তোমরা যত বেশি কোরআন, হাদিস এবং বই পড়বে, তত বেশি ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও কষ্ট করে আজকে এই পাঠাগারের অনুষ্ঠানে এসেছি। আমি চাই, এই পাঠাগারটি আরও অনেক বড় হোক। পাঠাগারটি যত বড় হবে, আমি তত খুশি হব।’

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া আলোচনা সভায় স্থানীয় সমাজসেবক মাওলানা মো. নুরুল আলম খান সভাপতিত্ব করেন এবং তরুণ কবি ইমরান মাহফুজ সঞ্চালনা করেন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক এইচ আর হারুন, বাংলাদেশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আগা আজাদ চৌধুরী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, চৌদ্দগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ফরায়েজী ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মীর হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক সাহাব উদ্দিন আহমাদ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *