কেরানীগঞ্জে বিএনপির হামলা: ফখরুলের বিবৃতি একপেশে, দাবি আ. লীগ নেতাদের

রাজনীতি

সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদক

বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার সময় নিপুণ রায়ের মারমুখী অবস্থা।

ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপির পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।

তবে ঘটনার পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া এক বিবৃতিতে ঘটনার দায় চাপানো হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর। বিষয়টিকে একপেশে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার (২৬ মে) কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় জনসমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। বেলা পৌনে ১১টায় যুবদলের একটি মিছিল জিনজিরা ছাটগাও এলাকা থেকে সমাবেশস্থলের দিকে আসে। এ সময় হঠাৎই সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর চালানো হয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে বিএনপি কর্মীরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সমাবেশে পুলিশের উপস্থিতিতে সরকারদলীয় কর্মীরা হামলা চালিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীকে মাথায় আঘাত করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় বিএনপির ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন দলটির মহাসচিব। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

আরও পড়ুন: কেরানীগঞ্জে বিশৃঙ্খলায় জড়ালেন বিএনপি নেতাকর্মীরা, আ. লীগ কার্যালয় ভাঙচুর

এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়িবহরে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে শুরু করায় এখন মরণকামড় দিতে শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে দেশব্যাপী পাড়ায়-মহল্লায় নেমেছে। বিএনপির কর্মসূচিতে আক্রমণে তাদের প্ররোচণা দিচ্ছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।

আওয়ামী কর্মীদের এই সহিংস আক্রমণ সুপরিকল্পিত, নতুনভাবে দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন তিনি। হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ফখরুল।

আরও পড়ুন: কেরানীগঞ্জে নিপুণের নেতৃত্বে আ. লীগ কার্যালয়ে হামলা

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা কেরানীগঞ্জের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

বিকেলে এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে কঠিন জবাব দেয়া হবে। তারা আগুন সন্ত্রাস, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তারা সন্ত্রাসের পথে হাঁটতে চায়। যদি আবারও তারা সন্ত্রাসের পথে হাঁটে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করবে।

জিঞ্জিরায় বিএনপি নেতাকর্মীরা পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ঝগড়া চাই না। নিউজে আসার জন্য জিঞ্জিরায় নিপুণ রায় আজকের ঘটনা ঘটিয়েছেন। অযথা পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে আসবেন না। অগণতান্ত্রিকভাবে কিছু করার চেষ্টা করলে আমাদের নেতাকর্মীরা ছাড় দেবে না।’

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, চাঁদকেই সমর্থন বিএনপি মহাসচিবের

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনার সমালোচনা করে টুইট করেছেন ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

আহত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ছবি শেয়ার করে নসরুল হামিদ লেখেন, ‘নিপুণ রায় এবং বিএনপির গুন্ডারা প্রকাশ্য দিবালোকে কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের বহু কর্মী আহত হয়েছেন।’

বিএনপি এবং তার কেন্দ্রীয় কমান্ডের এমন সহিংসতার বহু ইতিহাস রয়েছে জানিয়ে দেশবাসীকে গণতন্ত্র রক্ষায় এবং এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *