সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একসময় হোয়াইট হাউসে বক্তব্যে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা ও বিচ্ছিন্ন করার জন্য একঘরে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তেল নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার বিরোধিতা করায় এর পরিণাম ভোগ করতে হবে বলেও হুমকি দেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরাও সালমানের পক্ষে ছিলেন না। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও বলেছিলেন, এমবিএস হিসেবে বেশি পরিচিত যুবরাজ কখনও বিশ্বমঞ্চের নেতা হতে পারবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও করা হয়েছিল নানা মহল থেকে।
তবে তাঁদের এসব মন্তব্য এখন ফিকে হয়ে গেছে। কারণ, নিজের ও সৌদি আরবের অবস্থান বিশ্বরাজনীতিতে ক্রমাগত শক্ত করে চলেছেন সৌদির এই যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী। তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে গেল বছর সফর করেছেন বাইডেন, চলতি সপ্তাহে রিয়াদ সফরে যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের উষ্ণতায় ইরানসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ঐক্য ও সংহতির পালে হাওয়া লেগেছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং বর্ধিত রাজনৈতিক প্রভাব আরও বিস্তার করে চলেছেন এমবিএস। দৃঢ় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দেশটিকে দাঁড় করাতে পরিকল্পনায় নানামুখী পরিবর্তন এনেছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর অবস্থানও সুদৃঢ়।
গত কয়েক বছরে তেলের বাড়তি চাহিদা কাজে লাগিয়ে বিপুল অর্থ আয় করেছে সৌদি আরব। এতে সমৃদ্ধ হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার। আর এমবিএসকে প্রত্যাখ্যানকারীরা এখন তাঁকে সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানরাও। যুবরাজ চীনের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আরও গভীর করেছেন। এটি দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সহায়ক হয়েছে।
এতসব অর্জন থাকলেও কিছু বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না সৌদি যুবরাজের। ২০১৮ সালে সৌদি হিট স্কোয়াড ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেটের ভেতরে ভিন্নমতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করে। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হয়। নিজে অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসে, যুবরাজই সম্ভবত হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও পরে এমবিএস দেশের সম্পদ ও ক্ষমতার মাধ্যমে তাঁর অনেক হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করেছেন।
প্রথম দিকে তিনি সরকার থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দেন। পরিবর্তন আনেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি এবং সিনেমা থিয়েটারনিষিদ্ধ দেশটিতে বিনোদনের বিকল্প চালু করা। তাঁর এসব সিদ্ধান্ত যুবকদের আকর্ষণ করেছে। কারণ, তিনি জানেন রাজতন্ত্রে পুনর্র্নিবাচিত হওয়ার মতো ঝুঁকি তাঁর নেই।
খাসোগিকে হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে দেশটির অর্থসম্পদ কী করতে পারে। পশ্চিমা সরকারগুলো সমালোচনা ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বললেও শেষ পর্যন্ত অন্য স্বার্থই অগ্রাধিকার পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিমান কিনেছে সৌদি আরব। অন্যদিকে, তুরস্কও সরে যায় তাদের অবস্থান থেকে। গত বছর তুর্কি আদালত খাসোগির হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি সৌদি আরবে স্থানান্তর করে। এরপর তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমানতের জন্য ৫ বিলিয়ন ডলার ধার দেয় সৌদি আরব।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে পিছু হটছে, এমন ধারণা যুবরাজকে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে। রিয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার ও তেলের বৃহত্তম ভোক্তা বেইজিং।