♦ সুইডিশ রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার ♦ ইরাকি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স প্রত্যাহার ♦ ব্যবসা স্থগিত
অনলাইন ডেস্ক
ইরাকের বাগদাদে বিক্ষোভকারীরা সুইডিশ দূতাবাসে হামলা ও আগুন দেয়। পরে নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান মোতায়েন করে। ছবি : রয়টার্স
সম্প্রতি স্টকহোমে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় কূটনৈতিক বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। তারই জেরে ইরাকি সরকার বাগদাদে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়াও সুইডেনে ইরাকের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে প্রত্যাহার এবং সুইডিশ কম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে ইরাকের রাজধানীতে বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বারের মতো সুইডিশ দূতাবাসে হামলা চালায় এবং কম্পাউন্ডে আগুন দেয়।
সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিক্ষোভকে ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এক ইরাকি খ্রিস্টান শরণার্থীকে সুইডিশ পুলিশ দ্বিতীয়বার স্টকহোমে কোরআন পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে শুনে শত শত মানুষ দূতাবাসে প্রবেশ করে। সালওয়ান মোমিকা ইরাকি দূতাবাসের বাইরে কোরআন পাড়িয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আগুন দেননি।
এর আগে গত মাসে তিনি স্টকহোমের প্রধান মসজিদের বাইরে কোরআনের একটি কপি জ্বালান।
মুসলমানরা কোরআনকে সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে বিশ্বাস করে এবং এর প্রতি ইচ্ছাকৃত ক্ষতি বা অসম্মান প্রদর্শনকে গভীরভাবে আপত্তিকর বলে মনে করে। কিন্তু সমাবেশের স্বাধীনতার আইনগত অধিকারের কারণে আদালত পুলিশের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করার পর স্টকহোমে বিক্ষোভকে এগিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছিল।
বাগদাদের বিক্ষোভকারীরা প্রধানত শিয়া ধর্মগুরু মোকতাদা আল-সদরের অনুসারী।
তারা সুইডিশ দূতাবাসের দেয়াল ঘেঁটে, কম্পাউন্ডের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তবে সুইডেন বলেছে, বাগদাদে তাদের সমস্ত কর্মী অস্থিরতার পর নিরাপদ ছিলেন।
ইরাকি সরকার সুইডিশ দূতাবাসে হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছে, এ ঘটনায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তারা সুইডিশ সরকারকে সতর্ক করেছিল, মোমিকাকে কোরআন পোড়ানোর জন্য দ্বিতীয়বার অনুমতি দিলে তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
এরপর বৃহস্পতিবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি ইরাকে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া ইরাকের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইনা জানিয়েছে, টেলিকম জায়ান্ট এরিকসনের মতো সুইডিশ ব্যবসার জন্য ওয়ার্ক পারমিট স্থগিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, এই পদক্ষেপগুলো কোরআন এবং ইরাকি পতাকা পোড়ানোর পাশাপাশি ইসলামিক পবিত্রতার অবমাননার জন্য সুইডেনের বারবার অনুমতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রম ‘কঠোর ভাষায়’ তার দূতাবাসে হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে কূটনৈতিক মিশন এবং কর্মীদের রক্ষার জন্য ইরাকি কর্তৃপক্ষের একটি দ্ব্যর্থহীন বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
এ ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এটি ‘অগ্রহণযোগ্য’ যে ইরাকি বাহিনী ইরাকে সুইডিশ দূতাবাস রক্ষা করেনি।
কোরআন পোড়ানোর ঘটনা অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং পোপের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যারা মোমিকার কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছে। এতে সুইডেনের বাকস্বাধীনতা আইনের চারপাশে উত্তেজনাও কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
সুইডিশ পুলিশ প্রথমে কোরআন পোড়ানোর জন্য মোমিকার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু পরে আদালতে তা বাতিল হয়ে যায়। এই মাসের শুরুতে স্টকহোমে ইসরায়েলি দূতাবাসের বাইরে এক ব্যক্তিকে তাওরাত পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। লোকটি পরে আর তা করেননি। তিনি বলেছেন, তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমা রয়েছে এবং সেগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে।
সূত্র : বিবিসি