জি২০ সম্মেলন: ‘দশ হাতে’ নিরাপত্তা সামলাচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক

অনলাইন ডেস্ক

প্রথমবারের মতো জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজনে রীতিমতো ‘এলাহিকাণ্ড’ চলছে ভারতে। বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশগুলোর হর্তা-কর্তাদের এ সম্মেলন ঘিরে পুরো নয়াদিলি­ এখন ‘মোগল দুর্গ’। রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে সম্মেলনকেন্দ্র প্রগতি ময়দানের ভারত মন্ডপমে কনভেনশন সেন্টার পর্যন্ত একসঙ্গে ‘দশ হাতে’ নিরাপত্তা সামলাচ্ছে ভারত। বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে সেনা-পুলিশ-বিমানবাহিনী, এনএসজি কমান্ডো সবাইকে এক ছাতায় আনছে মোদি সরকার। প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার নিরাপত্তা কর্মীতে ছেয়ে গেছে দিলি­।

এখানেই শেষ নয়, বিরাট এ নিরাপত্তাব্যুহই শেষ চমক নয়! মাত্র দুদিনের এ সম্মেলনে (৯-১০ সেপ্টেম্বর) খরচের খাতা দেখলে চোখ কপালে উঠে যাওয়ার দশা, প্রাথমিক হিসাবে ১ হাজার কোটি রুপিরও বেশি! এনডিটিভি, ইকোনমিক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএনআই, পিটিআই, ফিনান্সিয়াল টাইমস।

সম্মেলনের মূল থিম ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। বিশ্বের ২৯ দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, উচ্চপদস্থ অতিথিদের আপ্যায়ন-অভ্যর্থনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে আরও সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই। অনাসৃষ্টি এড়াতে দিলি­জুড়ে পাহারায় থাকবে ৪ হাজার ৫০০ দিলি­ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্মীরা। এর মধ্যে রয়েছে এনএসজি কমান্ডোরাও। যারা রাষ্ট্রনায়কদের বহনকারী হেলিকপ্টার নামার হেলিপ্যাড ও নির্ভুল ড্রাইভিং দক্ষতার সাথে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার হিসাবে কাজ করবে। সম্মেলনের নিরাপত্তা দায়িত্বগুলোকে ৭টি ডোমেন ও জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। এতে অনুষ্ঠানের স্থান, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের থাকার স্থান, বিমানবন্দর, রাজঘাট, ট্রাফিক, মোটরকেড ব্যবস্থাপনা, সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রত্যেকের নেতৃত্বে থাকবেন ভেন্যু কমান্ডার। দিল্লির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা মধুপ তিওয়ারি জানান, দিলি­ পুলিশের অর্ধেকেরও বেশি এই সম্মেলনের নিরাপত্তায় থাকবে। সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স (সিএপিএফ) ও এলিট ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) এ ব্যবস্থায় দিলি­ পুলিশকে সহায়তা করবে। কমিশনার রণবীর সিং কৃষ্ণিয়ার অধীনে একটি দল নয়া দিল্লির আশপাশের এলাকাগুলো পাহারা দেবেন। নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক-ফ্যামনেও সমান নজর দিয়েছে দিল্লি।

পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ঐতিহ্যবাহী খাকি পোশাকের বদলে নির্ধারিত ডিজাইনে সেলাই করা পোশাক পরবেন। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও তার উপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তরা নীল স্যুট পরবেন। অন্য কর্মকর্তারা পরবেন হালকা রঙের স্যুট। দিল্লিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন, সবুজ মেকওভার ও অন্যান্য সৌন্দর্যায়নের কাজ দ্রুত ট্রাক হচ্ছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএফ) নিরাপদ আকাশসীমা নিশ্চিত করতে উন্নত টহল বিমান ও বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘এ দলটি দিল্লি ও নিকটবর্তী এলাকায় সমন্বিত মহাকাশ প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা মোতায়েন করবে।’ আরও বলেন, বিমানের যেকোনো ধরনের হুমকি এড়াতে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম মোতায়েন করা হবে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিমানবাহিনীর অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিমানবাহিনী তাদের কৌশলের অংশ হিসাবে মিডিয়াম রেঞ্জ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল (এমআরএসএএম) ও আকাশ এয়ার ডিফেন্স মিসাইলের মতো সিস্টেমসহ অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স মিসাইল স্থাপন করতে চায়। রাজধানীর ভেতরে ও নিকটবর্তী উভয় ক্ষেত্রেই বিমান ঘাঁটি সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে হিন্দান বিমান ঘাঁটিসহ আম্বালা, ভান্ডিয়া, আদমপুর ও সিরসা ঘাঁটি রয়েছে। হেলিকপ্টারের দায়িত্বে ১৮১ জন কমান্ডো মোতায়েন করা হবে। প্রায় ৪০০ জন অগ্নিনির্বাপক কর্মীও মোতায়েন করা হবে।

শুক্রবার দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কোনো অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাসী কাজ নাশকতা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য বিস্তৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজধানীতে অননুমতিপ্রাপ্ত প্রবেশ রোধ করার জন্য বস সীমানা সিল করা হবে। তবে, সাধারণ যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অফিস, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

সম্মেলনে কোনো ধরনের ঝামেলা এড়াতে কে৯ স্কোয়াড থেকে মোট ৬৯টি বিস্ফোরক শনাক্তকারী কুকুর আনা হবে। কুকুরগুলো কৌশলগতভাবে নয়া দিল্লির জেলাজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হবে।

শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রেসিডেন্ট ঋষি সুনাক ও সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত থাকবেন। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারাও উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠকটি এড়িয়ে যেতে পারেন। আসবেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। তার প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তাদের থাকার জন্য দিল্লির একাধিক হোটেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইসিটে মৌর্য, তাজ প্যালেস, শাংরি লাসহ শীর্ষস্থানীয় হোটেলগুলোতে রুম বুক করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তার সঙ্গীদের বিশেষ নিরাপত্তার সাথে আইসিটে মৌর্যে রাখা হবে।

অতিথিদের সুরক্ষার দায়িত্ব পালনে থাকবে কমান্ডরা। দিল্লি পুলিশ সব সিসি টিভি ফুটেজ নিরক্ষণের জন্য দুটি কন্ট্রোল রুম তৈরি করেছে। সরকারি সূত্রে বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকর্মীসহ ৫০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হবে। এ ছাড়াও সম্মেলন চলাকালীন সময়ে সুষ্ঠু যান চলাচলের তদারকি করবেন ১০ হাজার ট্রাফিক পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *