অধ্যক্ষের সামনে প্যান্টের চেইন খুললেন প্রভাষক, ভিডিও ভাইরাল

শিক্ষা-গবেষণা ও ক্যাম্পাস

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে ওই কলেজের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন নিজের প্যান্টের বেল্ট ও চেইন খুলে অধ্যক্ষকে অশালীন আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সোমবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন।

এর আগে রোববার দুপুরে ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ওই শিক্ষকের শাস্তিসহ অপসারণ দাবি করেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজিত কলেজ শিক্ষক শাহীন নিজের প্যান্টের বেল্ট ও চেইন খুলে অধ্যক্ষের উদ্দেশ্যে বলছেন- ‘আপনাকে ন্যাংটা হয়ে দেখাবো…’। অধ্যক্ষের কক্ষে কয়েকজন শিক্ষকের সামনেই তিনি এ অশালীন আচরণ করেছেন। তবে এ সময় অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা অপর শিক্ষকরা তাকে এ কাজ করা থেকে প্রতিহত করেন। পরে তিনি হাজিরা খাতায় সই করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সাচিবিক ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক।

রোববার দুপুরের দিকে অধ্যক্ষ সরওয়ার আলমের কক্ষে তিনি এ কাণ্ড ঘটান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কলেজে আসেন জাহাঙ্গীর আলম শাহীন। অথচ সকাল ৯টায় আসার কথা শিক্ষক-কর্মচারীদের। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে সই করার জন্য হাজিরা খাতা চান ওই শিক্ষক।

এ সময় তাকে অধ্যক্ষ সরওয়ার আলম বলেন, আপনি যে কয়টায় এসেছেন স্বাক্ষরে ততটাই লিখবেন। এতে রেগে গিয়ে প্যান্টের চেইন খোলার ঘটনা ঘটান তিনি। এ ঘটনার সময় আরও কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

উপস্থিত সহকারী শিক্ষক আব্দুল জলিল বলেন, কলেজে আসার টাইম অনুযায়ী হাজিরা খাতায় সই করতে বলায় রেগে যান শাহীন স্যার। এরপর বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে নিজের প্যান্টের চেইন খুলতে থাকেন তিনি; কিন্তু আমি তাতে বাধা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।

অপর প্রত্যক্ষদর্শী ক্রীড়া শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় শাহীন স্যার প্যান্টের বেল্ট ও হুক খুলে ফেলেন। একপর্যায়ে তিনি চেইন খোলার চেষ্টার পাশাপাশি প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।

অপর প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক একরামুল হক বলেন, শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থী স্কুলে থাকা অবস্থায় এমন করেন তাহলে কী শিখবে তাদের কাছে। জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের এটা চরম অন্যায় হয়েছে। ফলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহীন বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমাকে চাকরিচ্যুতির জন্য আমার বিপক্ষে একটি পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে। পুরো অডিও-ভিডিও প্রকাশ করা হোক, তাতে আমার দোষ প্রমাণিত হলে আমার শাস্তি হবে।

অধ্যক্ষ সরওয়ার আলম বলেন, রোববার আমার কক্ষে জাহাঙ্গীর আলম শাহীন যে আচরণ করেছে সেটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। সবার সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

কলেজ সূত্র জানায়, গত ৬ আগস্ট অধ্যক্ষ সরওয়ার আলম কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে শাহীনকে। এতে বলা হয়, গত ২০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত থেকে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করেছেন; যা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিরোধী। এছাড়াও দৈনিক ক্লাস রুটিনে ক্লাস থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্লাস করেন না; যার কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব প্রদান করা না হলে বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *