হৃদিতা ইফরাত
হামাস ইসরাইল সংঘাত
হামাস অভিযানের পর থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাজুড়ে নির্বিচারে চালানো হচ্ছে বিমান, রকেট এবং বোমা হামলা। ধ্বংস হচ্ছে বাড়িঘর, ভবন এবং মানুষের সহায়-সম্বল।
নারী-শিশুসহ নিহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে প্রতিদিন হাসপাতালে ছুটছে শত শত বাসিন্দা। যুদ্ধ আইন বিশ্বমানবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেখানেও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।
মঙ্গলবার রাতে ইসরাইল বাহিনীর এমনই এক বর্বর হামলার শিকার হলো গাজার আল আহলি আরব হাসপাতাল। ১২ দিনের যুদ্ধের সবচেয়ে নৃশংস হামলা! আর আল আহলি হাসপাতালে পরপর তিন হামলার মধ্যে এটি সবচেয়ে ধিকৃত হামলা।
আরোগ্য লাভের আশায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা দগ্ধ হলেন ইসরাইলের হিংসার বারুদে। জঘন্য এ হামলার বিশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখে ভড়কে যাওয়া ইসরাইলি সেনাবাহিনী কিছুক্ষণ পরই বিবৃতি দেয়-তারা নয়, হামলা চালিয়েছে হামাস অথবা ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদি (পিআইজি) গোষ্ঠী।
উলটোদিকে হামাস, পিআইজে, ফিলিস্তিন অথরটিসহ গোটা আরব বিশ্ব বলছে-ইসরাইলই চালিয়েছে এই বিমান হামলা। চলমান এ বিতর্কের মধ্যেই বুধবার এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানিয়েছে, আল আহলি হাসপাতালে মঙ্গলবারই প্রথম নয়, এর আগেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এবার নিয়ে গত ৭ দিনে মোট ৩ বার হামলা হয়েছে।
প্রথম হামলাটি চালানো হয় গত মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর)। পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন হাসপাতালকর্মীরা।
আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব দ্য এপিসকোপাল ডায়োসিস অব জেরুজালেম সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, সেসময় বোমা হামলায় হাসপাতালের তিনজন কর্মী সম্পূর্ণরূপে তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। সে রকেট হামলায় মেডিকেল ডিরেক্টরের বাড়িও ধ্বংস হয়।
দ্বিতীয়বার হামলা রোববার (১৪ অক্টোবর)। রকেট হামলাটি চালানো হয় একই হামপাতালের ডায়াগনস্টিক ক্যানসার ট্রিটমেন্ট সেন্টারে। ঘটনায় হাসপাতালের চারজন কর্মী আহত হন। এ হামলায় হাসপাতালের উপরের দুটি তলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রপাতিও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ম্যামোগ্রাফি এবং আল্ট্রাসাউন্ড বিভাগ।
তবে সর্বশেষ হামলাটিই সবচেয়ে বিভৎস আক্রমণ ছিল এটি। মঙ্গলবার রাতের এই বোমা হামলায় ৮০০ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। আহত শত শত। এখন অস্বীকার করলেও এ হামলার আভাস আগেই দিয়েছিল ইসরাইল বাহিনী।
এমনটাই জানিয়েছেন গাজার একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। বলেন, ইসরাইল বোমা হামলার কয়েকদিন আগে আল আহলি হাসপাতালে ‘সতর্কতা’ হিসাবে দুটি আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করেছিল। এমনকি আল আহলির ব্যবস্থাপককে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ খালি করার জন্যও সতর্ক করেছিল ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী।
গাজার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসুফ আবু আল-রিশ বলেছেন, ‘আইডিএফ (ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী) হাসপাতাল ব্যবস্থাপক আয়াদকে বলেছিল ‘শেল নিক্ষেপ ছিল সতর্কতা’।
তারা আরও বলেন, আপনাকে গতকাল দুটি শেল দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তাহলে আপনি কেন এই মুহূর্ত পর্যন্ত হাসপাতালটি খালি করেননি?’ আল আহলি আরব হাসপাতালটি গাজা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। হাসপাতালটি জেরুজালেমের এপিসকোপাল ডায়োসিস দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৮৮২ সাল থেকে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে গাজাবাসীকে।
গাজার সবচেয়ে প্রাচীন হাসপাতাল এটি। আরবি ভাষায় হাসপাতালটির নামের অর্থ ‘আরব জনগণের হাসপাতাল’। প্রতিবছর ৪৫,০০০-এরও বেশি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানে। গাজার গ্রামাঞ্চলগুলোতেও মোবাইল ক্লিনিক সেবা পরিচালনা করে হাসপাতালটি।
খ্রিষ্টান চার্চ পরিচালিত হাসপাতালটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীদের দাতব্য চিকিৎসা সেবাও দিয়ে থাকে। বয়স্ক নারী, পোড়া আঘাত, কম ওজন বা অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের বিনা মূল্যে যতœ, স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এবং মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত শিশুদের সহায়তা এর মধ্যে অন্যতম।
হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা চার্চ অব ইংল্যান্ডের চার্চ মিশন সোসাইটি। পরবর্তীতে ১৯৫৪ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পরিচালান করে ব্যাপটিস্ট চার্চের মেডিকেল মিশন। তখন এর নাম ছিল ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল। তারপর থেকেই পরিচালনার দায়িত্ব চলে যায় জেরুজালেমের এপিসকোপাল চার্চের হাতে।