সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
গত এক দশকে স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে চীন। স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি কমাতে দেশটির অতীতের কিছু অর্জন বেশ লক্ষ্যণীয়। জনবহুল দেশটি দুই দশক আগে গুটিবসন্ত নির্মূলে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছিল, চীন যা করার সিদ্ধান্ত নেয় তা করতে পারে। লিভার ক্যানসার নিরাময়ে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারের মাধ্যমে দেশটি আবারও তার সেই ক্ষমতার জোর দেখিয়ে দিয়েছে। জটিল এই রোগ নির্মূলে বিশ্বের প্রথমবারের মতো এবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল চীনের প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং।
বুধবার হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের লি কা শিং ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের গবেষণা দল ঘোষণা করেছে, তারা একজন ব্যক্তির স্টেজ-৪ লিভার ক্যানসার নিরাময় করেছেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হংকংভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক সাউথ চীনা মরনিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গবেষকরা দাবি করছেন, লিভার ক্যানসার নিরাময়ে বিশ্বের প্রথম চিকিৎসাপদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে।
দলের সহনেতা অধ্যাপক অ্যালবার্ট চ্যান চি-ইয়ান বলেছেন, তার সহকর্মীরা তাদের নতুন ‘কমাও এবং অপসারণ’ পদ্ধতির মাধ্যমে স্টেজ-৪ লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর টিউমার সঙ্কুচিত করে এটি নিরাময় করেছে। চিকিৎসায় তার দল স্টেরিওট্যাকটিক বডি রেডিয়েশন থেরাপির সঙ্গে ইমিউনোথেরাপির সমন্বয় কৌশল ব্যবহার করেছে।
বিশ্বে প্রথমবারের মতো, প্রফেসর চ্যান এবং তার দল সফলভাবে স্টেজ-৪ লিভার ক্যানসারকে এই সংমিশ্রণ কৌশলের মাধ্যমে টিউমারকে ‘কমিয়ে’ প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। তারপর দাতা লিভার (জীবিত মানুষের লিভার) প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ‘অপসারণ’ করে সফলভাবে এর নিরাময় করেছেন। বিশ্বের কোনো দেশেই বর্তমানে স্টেজ-ফোর লিভার ক্যানসার টিউমার সঙ্কুচিত করার অন্য কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই। দলটি ৬৫ বছর বয়সি এসব রোগীর ওপর এই কৌশল ব্যবহার করেছে।
ওং লোক-উইং (৬৫) নামের ওই রোগীকে প্রথম এ চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২০২২ সালে তার পেটে প্রথম টিউমার ধরা পড়ে। যার ব্যাস ছিল ১৮.২ সেন্টিমিটার। এটি তার প্রধান পোর্টাল শিরাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি বেঁচে থাকার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। গবেষকরা শেষ প্রচেষ্টা হিসাবে তারপর নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থাটি ব্যবহার করেছিলেন।
যার সফল ফলাফল পাওয়া গেছে। প্রথমে তার ক্যানসারের টিউমারের আকার হ্রাস করা হয়। পরে, ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়। অপারেশনটি করতে ১২ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। ওং অপারেশনের পর থেকে প্রায় চার মাস ধরে সুস্থ এবং ক্যানসারমুক্ত রয়েছেন। এটি বিশ্বের প্রথম এমন অপারেশন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলটি চিকিৎসার প্রতি রোগীর প্রতিক্রিয়ার হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত করার আশা করছে।