ডয়চে ভেলে
জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। ছবি: সংগৃহীত
উগ্র ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে জার্মানির বিভিন্ন শহরে। এএফডির জনপ্রিয়তায় লেগেছে ভাটার টান। জোট সরকারের অবস্থাও উদ্বেগজনক। একদিকে প্রতি সপ্তাহেই চলছে উগ্র ডানপন্থী মতাদর্শবিরোধী বিক্ষোভ, অন্যদিকে কমছে জোট সরকারের জনপ্রিয়তা।
আইএনএসএ ইন্সটিটিউটের গত সপ্তাহের জনমত জরিপ অনুযায়ী, চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ারের সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দলের পাশে আছে ১৪ শতাংশ এবং ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হাবেকের সবুজ দলের পাশে আছে মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ।
তবে আরেক জোট শরিক বাণিজ্যবান্ধব এফডিপি দলের গ্রহণযোগ্যতা এ মুহূর্তে এতটাই কম যে এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে সংসদেই থাকতে পারবে না। সর্বশেষ জনমত জরিপে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন পেয়েছে এফডিপি। জার্মানিতে ৫শতাংশের কম ভোট পাওয়া দল সরকারে থাকা তো দূরের কথা, সংসদেই যেতে পারে না।
এ পরিস্থিতিতেও স্টাইনমায়ারকে আনন্দ প্রকাশের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে উগ্র ডানপন্থি মতবাদবিরোধী বিক্ষোভ।
‘গণতন্ত্র রক্ষা’র উদ্দেশ্যে উগ্র ডানপন্থাবিরোধী এমন গণবিক্ষোভ গত ১৩ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহতেই হয়ে আসছে জার্মানিতে। নতুন বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহান্তে এ বিক্ষোভ সমাবেশের সূচনাটা হয়েছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক গণমাধ্যম কারেক্টিভ-এ প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর এক খবরের প্রতিক্রিয়ায়।
কারেক্টিভের সেই খবরে দাবি করা হয়, এএফডির কয়েকজন সদস্যসহ জার্মানির ডানপন্থী মতাদর্শের কিছু মানুষ এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর কৌশল নির্ধারণের জন্য আলোচনা করেছেন।
রোববার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশটি হয়েছে জার্মানির উত্তরাঞ্চলের শহর ভল্ফসবুর্গে। ছয় হাজারের মতো মানুষ অংশ নেন সেই সমাবেশে।
এছাড়া হানোফার, মাগডেবুর্গ, বোখুম, রিটবার্গ, এসেন ও বেশ কিছু ছোট শহরে এমন সমাবেশ হয়। মাগডেবুর্গের সমাবেশে সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী রাইনার হাসেলফও উপস্থিত ছিলেন।
সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)-এর নেতা বলেন, ‘যেখানেই বর্ণবাদ এবং অমানবিকতা দেখা দেবে- তার রূপ যেমনই হোক না কেন, আমাদের সবাইকে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
রোববার সারা দেশে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আজ আবার হাজার হাজার তরুণ এবং প্রবীণ, (তাদের মধ্যে) অনেকে সপরিবারে শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হবেন। আমরা সবাই এ সমাবেশের পক্ষে, কারণ, আমরা মিলেমিশে স্বাধীনভাবে সসম্মানে বাঁচতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, এসব সমাবেশ ঘৃণা, সহিংসতা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সকলের জোরালো প্রতিবাদ।
লাগাতার বিক্ষোভ সমাবেশের কিছুটা প্রভাব এএফডির জনপ্রিয়তাতেও পড়েছে। আইএনএস-এর জনমত জরিপ অনুযায়ী জার্মান সংসদের ডানপন্থি এই বিরোধী দলকে এই মুহূর্তে মাত্র ১৯ শতাংশ ভাগ মানুষ চায়। ২০২৩ সালের জুনের পর এই প্রথম জরিপে এত কম সমর্থন পেলো এএফডি। সেই তুলনায় বেশ ভালো অবস্থা সিডিইউ ও তাদের বাভারিয়ান সহযোগী সংগঠন সিএসইউ-এর। তাদের সমর্থন জানিয়েছে জরিপে অংশ নেওয়া ৩১ শতাংশ মানুষ।
এএফডির সমর্থন (১৯ শতাংশ) এই দুই দলের যৌথ সমর্থনের চেয়ে অনেক কম হলেও জোট সরকারের তিন শরিক এসপিডি (১৪ শতাংশ), গ্রিন (১৩ শতাংশ) ও এফডিপি (৪ শতাংশ)-র চেয়ে এখনো বেশি।