সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
ছবি: রয়টার্স
মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে হামলায় ঘটনায় চার ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে রাশিয়ার আদালত। এদের তিনজনকে চোখ বেঁধে মস্কোর একটি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চতুর্থজন হুইলচেয়ারে বসা ছিলেন। চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত শুক্রবার ক্রোকাস সিটি হলে হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ বা আইএস ভিডিও পোস্ট করেছে। তবে হামলায় ইউক্রেন জড়িত বলে দাবি করেছেন রুশ কর্মকর্তারা। যদিও কোনো প্রমাণ তারা তুলে ধরেননি। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কিয়েভ।
অভিযুক্তদের বিষয়ে যা জানা গেলো
রাশিয়া জানিয়েছে, অভিযুক্ত চারজন হলো দালেরদজহন মিরজোয়েভ, সাইদাক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা, শামসিদিন ফারিদুনি ও মুহাম্মাদসোবির ফায়জভ।
ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের তিনজনকে পুলিশ চোখ বেঁধে রাশিয়ার রাজধানীর বাসমানি জেলা আদালতে নিয়ে যাচ্ছে। সবাইকে আহত অবস্থায় দেখা গেছে। মিরজোয়েভ ও রাচাবালিজোদার চোখে কালশিটে পড়ে গিয়েছিলো এবং শেষজনের কানে ব্যান্ডেজ করা ছিলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মতে, ফারিদুনির মুখ মারাত্মকভাবে ফুলে গিয়েছিলো ও ফায়জভকে হুইলচেয়ারে আদালতে আনা হয়েছিল এবং তার একটি চোখ নেই বলে মনে হয়েছে।
অভিযুক্ত শামসিদিন ফরিদুনি এবং মুহাম্মাদসোবির ফয়জভকে আদালতে নেয়ার পর। ছবি: রয়টার্স
টেলিগ্রামে পোস্ট করা আদালতের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিরজোয়েভ ‘পুরোপুরি তার দোষ স্বীকার করেছে। রাচাবলিজোদাও অপরাধ স্বীকার করেছে। এই চারজনই রাশিয়ার নাগরিক বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস।
আদালতের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২২ মে বিচার কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই চারজন আটক অবস্থায় থাকবে। শুক্রবার রাতে মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে চারজন বন্দুকধারী হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মস্কোর এ কনসার্টে অংশ নেওয়া আনুমানিক ছয় হাজার মানুষের ওপর হামলাকারীরা গুলি চালানো শুরু করে। অনুষ্ঠানস্থলে তারা আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ায় ছাদ ধসে পড়ে। রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এতে ১৩৭ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
হামলায় অভিযুক্ত দালেরদজন মিরজোয়েভ, সাইদাক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা। ছবি: রয়টার্স
হামলা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
ইসলামিক স্টেট গ্রুপ বা আইএস কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, খোরাসানে ইসলামিক স্টেট বা আইএস-কে নামে পরিচিত একটি শাখার মাধ্যমে এই হামলা পরিচালিত হয়েছিলো।
গোষ্ঠীটি পরে কনসার্ট হলের ভেতরে থাকা জনগণের ওপর হামলাকারীদের গুলি করার গ্রাফিক ফুটেজ প্রকাশ করেছে। এই ভিডিওটি প্রকৃত ভিডিও বলে যাচাই করেছে বিবিসি।
যদিও কোন রাশিয়ান কর্মকর্তা এ দাবি স্বীকার করেননি। বরং কোন প্রমাণ ছাড়াই তারা বলছেন, ইউক্রেন আক্রমণকারীদের সাহায্য করেছিলো। গ্রেপ্তারের সময় ব্রায়ানস্ক অঞ্চল দিয়ে তারা সীমান্ত দিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার মস্কোর এই দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অধিদপ্তর বলছে, ভারী মাইন সীমান্ত অতিক্রম করে, রাশিয়ান সৈন্যদের থেকে পালিয়ে নিরাপদে পৌঁছানোর চেষ্টা করা ‘অযৌক্তিক’।
এ হামলায় সহায়তার অভিযোগে আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্ভাব্য বড় হামলার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি মাসের শুরুতে মস্কোকে সতর্ক করেছিল। পরে দেশের নাগরিকদের জন্য একটি নোটিশ জারি করেছিলো।
প্রোপাগান্ডা হিসেবে ও রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা মনে করে সতর্ক বার্তাটি প্রত্যাখ্যান করেছিল রাশিয়া। ওয়াশিংটন হামলার পর বলেছে, আইএসের দাবি নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।
রাশিয়াতে আইএস ও তার সহযোগীদের আক্রমণ করার ঘটনা এটিই প্রথমবার নয়। ২০১৫ সালে মিসরে ২২৪ জন যাত্রীবাহী একটি রুশ বিমানে বোমা হামলার দাবি করেছিল আইএস। ওই যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন রাশিয়ার নাগরিক।
আইএস ২০১৭ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ মেট্রোতে বোমা হামলারও দাবি করেছিলো। যাতে ১৫ জন নিহত হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএস বেশ কয়েকটি কারণে রাশিয়াকে প্রাথমিক টার্গেট বলে মনে করে।
যার মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনামলে সিরিয়ায় আইএসের শক্তিশালী একটি ঘাঁটি ধ্বংস করার বিষয়ে রাশিয়ার ভূমিকা ছিলো। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চেচনিয়ায় মস্কোর দুটি নৃশংস যুদ্ধ ও আফগানিস্তানে সোভিয়েত আমলের আগ্রাসনও আইএসের হামলার কারণ বলে তারা মনে করেন।
আইএস-কে প্রধানত আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে কাজ করে। এর নাম এই অঞ্চলের একটি পুরানো শব্দের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। আইএসের শাখাগুলোর মধ্যে এই শাখা সবচেয়ে সক্রিয়। ২০২১ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে কাবুল বিমানবন্দরে মারাত্মক আত্মঘাতী হামলার জন্য তারা দায়ী ছিল।
তারা প্রায়ই প্রচারণা চালানোর সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করে।