ইরানের পক্ষে ইসরায়েলে পাল্টা হামলার সম্ভাবনা কতটা

আন্তর্জাতিক

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ জন নিহত হওয়ার পর কঠিন সময় পার করছে তেহরান। একদিকে এই হামলার জবাব দিতে চাইছে দেশটি। অন্যদিকে ইরান এমন কোনো কাজ করতে চায় না যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, ইরান পাল্টা আঘাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমেরিকার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ইরান ড্রোন ও ক্রুস মিসাইল হামলার পরিকল্পনা করছে। তবে কখন ও কোন জায়গায় এই আঘাত করা হবে সেটি নিশ্চিত নন কর্মকর্তারা।

এই হামলা এখন থেকে শুরু করে রমজান মাসের শেষ সপ্তাহে যে কোন সময় হতে পারে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। ড্রোন ও মিসাইল হামলা ইরাক ও সিরিয়ার মাটি থেকে নাকি ইরানের ভেতর থেকে পরিচালনা করা হবে সেটিও এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি মার্কিন গোয়েন্দারা।

এদিকে ইসরায়েলও বলেছে, ইরান যদি পাল্টা আঘাত করে তাহলে তারা আবারও হামলা চালাবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের সংকেত বেজে উঠতে পারে।

ইরানের সামর্থ্য কতটুকু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো কড়া সামরিক জবাব দিতে গেলে সেটি যুদ্ধকে ইরানের দোরগোড়ায় টেনে আনবে। কারণ, ইরানের বিষয়ে ইসরায়েলও ছেড়ে কথা বলবে না।

অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলার যথাযথ জবাব দিতে না পারলে ইরানের সামরিক সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। ফলে ভবিষ্যতে ইসরায়েল ইরানকে আরও দুর্বল ভাববে এবং তাদের ওপর চেপে বসবে।

ইরানকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা দুর্বল নয়। যে কোন হামলার জবাব দেবার ক্ষমতা তাদের রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের কোন যুদ্ধের সূত্রপাত না করে ইরান কিভাবে ইসরায়েলকে জবাব দিতে পারে সেটি নিয়ে এক ধরনের দোদ্যুল্যমানতা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ইসরায়েলকে পাল্টা আঘাত করার মতো সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য ইরানের রয়েছে কী না?

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ও লেখক আলী সাদরাজদেহ বিবিসিকে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর মতো সামর্থ্য ইরানের নেই। কিন্তু দেশের ভেতরে জনগণকে দেখানোর জন্য হলেও ইরানকে একটি জবাব দিতে হবে। এছাড়া নিজেদের মিত্রদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্যও ইরানকে একটি পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইরানের এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা। কিছু ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়ে ১০০ জন ইসরায়েলিকে হত্যা করার চেয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে এগিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে শুধু ইসরায়েল নয়, আমেরিকার হামলা ঠেকাতেও সক্ষম হবে ইরান।

প্রতীকী জবাব দেওয়া

পর্যবেক্ষক সাদরেজাদেহ মনে করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে ইরান একটি প্রতীকী জবাব দেওয়ার উপায় খুঁজছে। কয়েক বছর আগে ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে ইরাকে হত্যা করার পর ইরানের তরফ থেকে ‘কড়া প্রতিশোধের’ হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটেনি।

সোলাইমানি হত্যার জবাবে ইরান ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছিল ইরাকে অবস্থিত আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিতে। কিন্তু সেই হামলায় আমেরিকার কোন সৈন্য হতাহত হয়নি। বরং হামলার আগে আমেরিকার সেনাবাহিনীকে মিসাইল নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।

ভার্জিনিয়া টেক স্কুল অব পাবলিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর ইউসুফ আজিজি বলেন, ইরানের ভেতরে পর্দার অন্তরালে দুটো শক্তির মধ্যে মতভেদ চলছে। একটি পক্ষ চাইছে ইরান পারমানবিক শক্তি অর্জন করার মাধ্যমে ইসরায়েলি অগ্রাসন রুখে দাঁড়াক। আরেকটি অংশ চায় ইসরায়েলে সরাসরি হামলার মাধ্যমে এর জবাব দেওয়া হোক।

এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করে পারমাণবিক লক্ষ্য অর্জন করার বিষয়টি হয়তো অগ্রাধিকার পাবে।

মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের কোন যুদ্ধ শুরু হোক সেটি ইরান চায় না। তেহরানের হাতে দুটি বিকল্প আছে। একটি হচ্ছে– আমেরিকার সৈন্য এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাপনার ওপর হামলার জন্য ইরান সমর্থিত গ্রুপগুলোকে মদদ দিতে পারে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে– ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করে এগিয়ে নেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির রাশ টেনে ধরতে চাইছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার কর্মকর্তারা ইরানের গতিবিধি খুবই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ইরান সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী ইরাক ও সিরিয়াতে অবস্থিত মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলান সম্ভাবনা আছে কী না সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে ওয়াশিংটন।

তবে সিরিয়া ও ইরাকে আমেরিকার সৈন্যদের ওপর ইরান-সমর্থিত গ্রুপগুলোর হামলার বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দাদের দিক থেকে এখনো পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইরান কী করবে তাহলে

ইরান হয়তো বিদেশে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস ও বিভিন্ন ইহুদি স্থাপনার ওপর হামলা চালাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স-এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এলিয়ট আব্রামস বলেন, ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হতে চায় না বলে তার বিশ্বাস। তবে ইসরায়েলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় তারা হামলা চালাতে পারে।

ইরান আরেকটি উপায়ে জবাব দিতে পারে। সেটি হচ্ছে– তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি তরান্বিত করা। ইউরেনিয়াম আরও সমৃদ্ধ করে সেটিকে পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী করে তোলা। অথবা প্রকৃত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির নকশা পুনরায় শুরু করা।

কিন্তু এসব পদক্ষেপ ইরানের জন্য উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন। ইরান এসব কাজ করতে গেলে আমেরিকা ও ইসরায়েলের হামলাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক সিএসআইএস-এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন অল্টারম্যান মনে করেন ইসরায়েলের দূতাবাসে হামলার মতো পদক্ষেপ ইরান নেবে না। ইরান এখন কোন পথে হাঁটবে এ বিষয়টি নির্ভর করছে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির সিদ্ধান্তের ওপর।

তথ্যসূত্র- বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *