মানুষের ঘোড়ায় চড়ার অভ্যাস ৫০০০ বছরের পুরোনো

অন্যান্য জীবনযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক
মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসের সঙ্গে যে কয়েকটি প্রাণী জড়িত, তার অন্যতম ঘোড়া। এই চারপেয়ে মানুষকে দিয়েছে গতি ও সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস।

তথ্য ছাড়াই অনুমান করা যায়, ঘোড়ার ব্যবহার চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। কত মানুষ ঘোড়ায় চড়ে শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে। আবার কেউ কৃষিকাজে ব্যবহার করেছে, করছে বাণিজ্য। সব মিলিয়ে রেল আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত ঘোড়াই ছিল দ্রুততম বাহন।
কখনো কি প্রশ্ন জাগে না, মানব জাতি প্রথম কবে ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছে? সে প্রশ্ন নিয়েই দীর্ঘদিন মগ্ন ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি একটা আবিষ্কার তাদের চমকে দিয়েছে। পাওয়া গেছে পাঁচ হাজার বছর আগের দলিল, মানুষ তখনো ঘোড়ায় চড়ে বেড়াত।
মধ্য ইউরোপে পাওয়া গেছে পাঁচ হাজার বছর আগের মানুষের পুরোনো হাড়। হাড়গুলো বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিকের জাদুঘরে ছিল। মোট ২০০টি হাড় নিয়ে গবেষণা করেছেন নৃবিজ্ঞানীরা।

ডেভিড অ্যান্থনি, মার্টিন ট্রটম্যান ও ভলকার হেইডের গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে।
তারা পুরোনো হাড়ে বিশেষ দাগ আবিষ্কার করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব হেলসিঙ্কির নৃবিজ্ঞানী মার্টিন ট্রটম্যানের দাবি, হাড়ের গায়ে দাগ মূলত ঘোড়ায় চড়ার অভ্যাসের কারণে তৈরি হয়েছে।
যেকোনো ধরনের হাড়কে জীবনীগ্রন্থের মতো পাঠ করা যায়। অন্তত ট্রটম্যান সেটাই মনে করেন। হাড়ের দাগ নিয়ে গবেষণায় তার বিস্তর অভিজ্ঞতা।
ঘোড়ার হাড়ের চেয়ে মানুষের হাড় সংরক্ষিত হয় সহজে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্তত পাঁচ ব্যক্তি ছিল অশ্বারোহণে ওস্তাদ পর্যায়ের। অর্থাৎ পাঁচ হাজার বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগে প্রাচীন ইয়ামনায়া জনগোষ্ঠীর মানুষ ঘোড়ার ব্যবহার শিখেছিলেন ভালোভাবেই। হাল নাগাদ ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে প্রাচীন ঘোড়ায় সওয়ারীর তথ্য। এর আগেও ঘোড়াকে ব্যবহার করেছে মানুষ। তবে সেটুকু কেবল দুধ দহন ও কৃষিজ ব্যবহারে।
বর্তমান ইউক্রেন ও পশ্চিম রাশিয়ায় গড়ে ওঠেছিল প্রাচীন ইয়ামনায়া সংস্কৃতি। পশ্চিমে হাঙ্গেরি থেকে পূর্বে মঙ্গোলিয়া; ইউরেশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের প্রভাব। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার সঙ্গে ছিল তাদের সম্পর্ক। আধুনিক ঘোড়ার ঐতিহ্য সেখানে। বলা বাহুল্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য উন্নতিতে ইয়ামনায়া সংস্কৃতিতে ঘোড়া ভীষণ ভূমিকা রেখেছিল। এ আবিষ্কার মানব সভ্যতায় ঘোড়া প্রবেশের গল্পে নতুন আলো ফেলবে। দেখার বিষয়, এর পুরোনো কোনো রেকর্ড খুঁজে পান কি-না গবেষকরা। এপি অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *