সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন
প্রতীকী ছবি
খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মারধরের কারণ জানা গেছে। সরকারি দলের ওই নেতা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তিনি অধ্যক্ষ পদে মাসুদুর রহমান নামে জামায়াতের এক নেতাকে নিয়োগ দিতে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন। কিন্তু জামায়াত নেতা পরীক্ষায় পাস না করায় নিয়োগ কমিটির সদস্য জবির অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তাঁর নিয়োগে সম্মতি দেননি। এর পর তাঁকে পিটিয়ে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। গত শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এলাকার ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। এর আগেও তাঁর হাতে ইউপি সচিব, আইনজীবীসহ অনেকেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
অন্যদিকে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান এক সময় খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও কয়রা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নামে রাষ্ট্রদ্রোহ, নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলাসহ প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে। এসব মামলায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয় তাঁকে। আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে তাঁকেই নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
জানা গেছে, সম্প্রতি ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদের জন্য পত্রিকায় কয়েক দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য সাতজন প্রার্থীর আবেদন গোপন করে তাঁর এবং সভাপতির অনুগত ৫ জনকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেন।
এর মধ্যে পাতাখালি ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আফসার উদ্দীন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করায় তাঁকে শেষ মুহূর্তে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর মাত্র ৪ ঘণ্টা আগে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছে তাঁকে। পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার পর সভাপতি তাঁকে ডেকে আলাদা কক্ষে নিয়ে হুমকি দেন এবং তাঁর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। বিষয়টি নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের জানানো হয়। তাঁর দাবি, তিনি লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেলেও তাঁকে পরিকল্পিতভাবে অকৃতকার্য দেখানো হয়।
তিনি বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি মাসুদুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিতে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন বলে পরীক্ষা শুরুর আগেই জানাজানি হয়। এ কারণে অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নেননি।
গত শুক্রবার নিয়োগ পরীক্ষায় ৬ জন প্রার্থী অংশ নেন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় কেউ কৃতকার্য না হওয়ায় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি জবির অধ্যাপক নজরুল ইসলাম কাউকে নিয়োগ নাদিয়েই চলে যেতে চান। তখন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ তাঁকে আটকে রেখে মারধর করে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের নামে কয়রা থানায় মামলা হয়েছে।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়েই জানতে পারি, একটি পাতানো পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। তবে লিখিত পরীক্ষা শেষে কেউ পাস না করায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে চাইলে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সেখানে অনেক বাগ্বিতণ্ডা চলা অবস্থায় মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান আমার দুই পা জড়িয়ে ধরেন এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। নিয়োগ না পেলে আমাকে পথে বসতে হবে।
ওই মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক বলেন, সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও একজন জামায়াত নেতাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনি ওই জামায়াত নেতার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন বলে এলাকার সবাই জানে। তাঁর নামে অনেক মামলা থাকায় তিনি প্রতিষ্ঠানে সময় দিতে পারেন না। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে তাঁর নিয়োগ ঠেকাতে এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষ স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে মাসুদুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনের একজন নেতাকে অধ্যক্ষ করতে গিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যকে নিগৃহীত করা দুঃখজনক। সাংগঠনিকভাবে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেন বলেন, ওই ঘটনার পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।