হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে ইসরায়েলকে মানা যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক

অনলাইন ডেস্ক


ছবি: আল-জাজিরা

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে ইরানের সঙ্গে শত্রুতা আরও প্রসারিত হবে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অভিযান চালাবে এবং এ জন্য তারা প্রস্তুতও। ইসরায়েলের এই মনোভাব প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন সতর্কবার্তা এলো। খবর গার্ডিয়ানের

মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, ইসরায়েল যখন গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত, তখন লেবাননে আরেকটি আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়ালে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে তেল আবিবের জন্য।

হিজবুল্লাহর হামলায় গত সপ্তাহে ইসরায়েলের বিস্তীর্ণ এলাকায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। রকেট হামলার আগুন থেকে ছড়িয়ে পড়ে দাবানল। এর পরই দেশটির উগ্র ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেনগভির হিজবুল্লাহকে ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে, ইসরায়েল এখন নর্দার্ন ফ্রন্টেও যুদ্ধে জড়াতে চায়। এ ঘটনা এমন সময় ঘটছে, যখন গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে।

মোসাদের সাবেক কর্মকর্তা হাইম টোমারও হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন। তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ইসরায়েলের ‘ইহুদিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি’র জন্য হুমকি। তাঁর মতে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ইসরায়েলের অর্থনীতিকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সরকারের সক্ষমতা ধরে রাখাও কঠিন হবে। এমনকি হিজবুল্লাহর রকেটে ইসরায়েল নাস্তানাবুদ হতে পারে। তেল আবিবের ভাগ্যে একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, হিজবুল্লাহর কাছে যে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা দিয়ে তারা ইসরায়েলের গ্যাসক্ষেত্র কয়েক সেকেন্ডে উড়িয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া ইরানি রাডারের কারণে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী লেবাননের আকাশে সফলতা পাবে না। হিজবুল্লাহর কাছে রয়েছে এক লাখ থেকে দেড় লাখ যুদ্ধ সরঞ্জাম। প্রতিদিন দেড় হাজার রকেট নিক্ষেপের সক্ষমতাও রাখে সংগঠনটি।

হারেৎজের কলামিস্ট আমোস হারেল সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলে এখন ক্লান্ত এবং দেশটি বহুমাত্রিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থায় যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট কেবল ব্যর্থতাই ডেকে আনতে পারে।

হিজবুল্লাহ ২০০৬ সালে ইসরায়েলি অস্ত্রের বিরুদ্ধে ট্যাঙ্কবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। গত সপ্তাহে তারা একাধিকবার ছোট কামিকাজে ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা সীমান্তে ইসরায়েলের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে। এখন ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী বা সরকারের উপলব্ধি এসেছে– তারা ক্রমে হিজবুল্লাহর দিক থেকে দীর্ঘ যুদ্ধে আটকে যাচ্ছে। এমনকি গাজায় যদি যুদ্ধ বন্ধও হয়, এর পরও উত্তরের যুদ্ধ থেকে তেল আবিব মুক্তি পাবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল সম্ভবত আন্তর্জাতিক বৈধতা ছাড়াই আরেকটি যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে। এতে ব্যাপক বেকায়দায় পড়ে যাবে ইসরায়েলি বাহিনী। কারণ, মার্কিন সমর্থন ছাড়া হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়া একটি ক্লান্ত বাহিনীর জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *