সাকিবের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

Uncategorized

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

যশোর পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেডিয়ামপাড়ায় যেখানেই অপরাধ-অপকর্ম, সেখানেই কিশোর সাকিব ইকবালের (২০) নাম উঠে আসছে। হুমকি-ধমকি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, মাদক, ছিনতাই ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ থেকে হেন কোনো অপরাধ নেই যেখানে তার নাম নেই।

তিনি যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওশিন সুলতানা সুমির ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকায় শান্তি ফেরাতে ও বিচারের দাবিতে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর বেপরোয়া ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৭১ জনের গণস্বাক্ষরকৃত অভিযোগটি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন।

তবে অভিযুক্ত সাকিব ইকবালের মা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওশিন সুলতানা সুমির দাবি- ‘স্থানীয় একটি চক্র রাজনীতিকভাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। সেটা সত্য নয়। আমার ছেলে পড়াশোনা করে স্থানীয় একটি কলেজে। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকভাবে মামলার আসামি থাকলেও সে জামিনে রয়েছে। স্থানীয় কুচক্রী মহল এমন অভিযোগ করেছে। আমি রাজনীতি করলেও সেই রাজনীতির ছোঁয়া আমার সন্তানের উপর পড়তে দেইনি।’

লিখিত অভিযোগে এলাকাবাসী উল্লেখ করেছেন, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নওশিন সুলতানা সুমির পুত্র সাকিব ইকবাল (২০) দীর্ঘদিন ধরে স্টেডিয়ামপাড়ায় পৌর হকার্স মার্কেট, স্টেডিয়াম পাড়া ও খড়কি এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাদের নামে হত্যা প্রচেষ্টার মামলাসহ একাধিক রয়েছে। গত ১৬ জুন রাত ১২ টার দিকে মনিরুল ইসলাম মুন্না নামে একজন কলেজ শিক্ষককে যশোর পৌর হকার্স মার্কেটের সামনে হেঁটে যাওয়ার সময় সাকিবের নেতৃত্বে আশিক ইকবাল, ইব্রাহিমসহ ১০-১২ জনের একটা সন্ত্রাসী দল ছিনতাই ও হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র বার্মিজ চাকু দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করে। এতে তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষত বিক্ষত হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় চিৎকার করলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

এরপর পরিবারের লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে এবং তার অবস্থা এখনো সংকটপূর্ণ। এ ঘটনায় মনিরুল ইসলাম স্ত্রী ফারজানা তানজাম (৩৮) কোতোয়ালি থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।

অভিযুক্ত সাকিব ইকবাল নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি মোটরসাইকেলসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা গভীর রাত পর্যন্ত পৌর হকার্স মার্কেট, পৌরপার্ক গেট, স্টেডিয়ামপাড়া, খড়কী এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ২৫ জুন রাতে মদ্যপান ও মাতাল অবস্থায় যশোর শামসুল হুদা-স্টেডিয়ামের নাইট গার্ড রয়েল হোসেনকে বেদম প্রহার ও অমানসিক নির্যাতন করে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু স্টেডিয়াম পাড়ায় গরিব, অসহায়, ও দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করে। কম্বল বিতরণ শেষে সাকিব ও ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী আজিজুল ইসলাম নামের একজন দিনমজুরকে ব্যাপকভাবে প্রহার ও অমানবিক নির্যাতন করে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি প্রদান করে।

গত ৮ মে যশোর স্টেডিয়াম মার্কেটের বিশিষ্ট তৌফিক ইকবালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে হামলা চালায়। নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাকিব ইকবালের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী; যা সিসি ক্যামেরায় ওই ঘটনা সংরক্ষিত আছে।

এছাড়া যশোর স্টেডিয়ামপাড়ায় ব্যবসায়ী ও যশোর স্টেডিয়ামপাড়া কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকারী কমিটির সদস্য আতিয়ার রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে এবং বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী সাকিব ইকবাল তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করে। যশোর স্টেডিয়ামপাড়ার সাবেক অবসরপ্রাপ্ত হিসাব কর্মকর্তা নুরুল হককে সন্ত্রাসী আশিক ইকবাল হত্যার হুমকি প্রদান করে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্টেডিয়ামপাড়ার কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হায়াতুজ্জামানকে বেশ কয়েকবার মোটরসাইকেল দিয়ে হত্যার প্রচেষ্টা চালায় সাকিবের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। দীর্ঘ দিন যাবত সাকিব ইকবাল ও তার মা নওশিন সুলতানা সুমির রাজনৈতিক ক্ষমতাকে হাতিয়ার করে স্টেডিয়ামপাড়ায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন স্টেডিয়াম পাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ মানুষ অত্যাচারিত হয়ে আসছে। কেউ মুখ খুললেই তাকে হত্যার হুমকি দেয় এলাকা ছাড়ার। পৌরপার্কের অধিকাংশ ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে এই সাকিব ও তার গ্যাং জড়িত। বিষয়গুলো ও ঘটনাসমূহ সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, এলাকাবাসী একটি স্মারকলিপি বা অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করবে পুলিশ। কেউ এলাকায় শান্তি বিনষ্ট বা বিশৃঙ্খলা করছে পুলিশ কাউকে ছাড় দেবে না, যিনি যে রাজনীতি বা ব্যক্তির ছত্রছায়াতে থাকুক না কেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *