মহানায়িকা সুচিত্রা সেন

বিনোদন

সুবর্ণবাঙলা বিনোদন

উত্তমকুমার কে দিয়ে ‘নায়ক’ ছবি করেছেন সত্যজিৎ রায়ের মত প্রবাদপ্রতিম চিত্র পরিচালক, অথচ সুচিত্রা সেন কে নিয়ে কোনওদিন ‘নায়িকা’ ছবি তৈরি করেন নি কোনও পরিচালক, প্রযোজক৷

‘প্রণয় পাশা’ সেই ছবি যেখানে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন শেষবারের মত অভিনয় করেছেন৷ গ্ল্যামার,অনুকরনীয় ভঙ্গিমা,হাসির বিচ্ছ্বুরণ এমন, তিনি নায়িকা নন হয়ে গিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের চিরকালের মহানায়িকা৷

রমা সুন্দরী, কিশোরী বয়স থেকে নিজেও জানতেন,অন্যরা মেনে নিতে দ্বিধা করেন নি৷মজার বিষয় বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে যদি তিনি সেজেগুজে হাজির হতেন,অন্য ছেলেরা যে তাঁর সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত হয়ে উঠত সেকথা তাঁর বন্ধুদের স্মৃতিকথায় বারেবারে উঠে এসছে৷পড়াশোনায় যে খুব ভাল ছিলেন বলা যাবে না গান-নাচে ঝোঁক ছিল৷যখন সপ্তম শ্রেনীতে পড়তেন তখন সিনেমা দেখার নেশা হয়েছিল,গিয়েছেন আজকের বাংলাদেশের পাবনার অরোরা সিনেমা হলে পরে যার নাম হয়েছিল ‘বানী’৷

ছোটবেলায় যেমন কথা কম বলতেন বড় হয়ে বাকপটু যেমন হয়েছিলেন তেমন চেহারা,হাবভাব,বন্ধুদের কাছে এত আকর্ষনীয় ছিল যখন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতেন,কথা বলার স্টাইল,ঠোঁটের কোণের বাঁকা হাসিতে সবাই মুগ্ধ হতেন৷

পাবনায় থাকার সময় দিদি উমা সেনগুপ্ত ছিলেন রমার বড় বন্ধু,খুব ভাব দুই বোনের,যেমন হয় আর কি,একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া,একই সঙ্গে খাওয়া,মনের কথা দুজন দুজনকে বলা৷

সুন্দরী রমাকে নিয়ে বড় বেশি আগ্রহ পাড়ার ছেলেদের৷কলেজের ছেলেরাও কম যায় না৷খুব মজার তথ্য হল ওই ছেলেরা যাতে রমাকে দেখতে না পায় সেজন্য তাদের মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ঘরের জানলা-দরজা বন্ধ রাখার কথা বলতেন,সেকথা শুনে রমা অবশ্য একটু রেগে মাকে বলতেন ‘অন্ধকারে থাকব নাকি’! আসলে বোধহয় চাইতেন ছেলেরাও তাঁর দিকে দেখুক!বয়ঃসন্ধিকালে সেটাই বোধহয় স্বাভাবিক !

রমার বানী পিসি যিনি পাবনা গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন,ভাইঝিরা বিশেষত রমা ও অন্য বোনেরা রাস্তায় বের হলে তিনি আগে আগে হাঁটতেন,ছেলের দল বেজায় হতাশ হয়েও টিপ্পনি কাটত ‘ইঞ্জিন চলছে,পিছনে বগি’৷কেউ মজা করে বলত ‘বাংলার বাঘ’,কেউ বা বলত ‘বডিগার্ড’৷
নিজের দাদার বন্ধুরাও রমার সাথে আলাপ করতে অথবা এক পলকে একটু দেখার জন্য মজার পদ্ধতি অবলম্বন করতেন৷দাদার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে তারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে যেতেন,রমার উমা দিদি বিষয়টা অত ভাল না বুঝলেও বিচক্ষণ রমা বুঝতেন আসল উদ্দেশ্য রমা কে দেখা,তবে দাদার বন্ধুদের কাছেও তিনি ছিলেন অধরা মাধুরী বলতেন ‘দিদি দরজাটা বন্ধ করে দাও তো’৷

সুচিত্রা সেনের বিয়ের সম্মন্ধটা এনেছিলেন কমলা পিসি ১৯৪৩সালে রমা যখন প্রথম কলকাতায় আসেন উঠেছিলেন পিসির শান্তিনিকেতনের বাড়িতে,সেখানে প্রথম এক ঝলক দেখেছিলেন ভাবী বরকে৷বড়দিদি উমার বিয়েতে হবু স্বামী দিবানাথ সেনের সঙ্গে আলাপ হয়ে গিয়েছিল সেই বিয়েতে তিনি এসেছিলেন অতিথি হয়ে,দুজনের দুজনকে পছন্দ করেছিলেন সেটা পৃথিবীর কোনও গোপন রহস্য নয়৷

রমা যখন বাংলা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন তখন সত্যিই বাংলা সিনেমা নতুন করে উত্তরণের পথ খুঁজছে,আক্ষরিক অর্থে সুন্দর মুখের নায়িকার বড় অভাব,নিউ থিয়েটার্সের স্বর্ণযুগ শেষ৷সত্যি বলতে কি একজন অপরূপ সুন্দরী নায়িকা কে আঁকড়ে বাঁচার কি মরিয়া চেষ্টা চলেছিল,সঙ্গে অবশ্যই ছিলেন উত্তমকুমারের মত নায়ক,সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রতিষ্ঠা বাঁচিয়ে দিয়েছিল ডুবন্ত বাংলা সিনেমাকে৷

বড় ঘরের বউ সিনেমায় নেমে পরিচিত হয়েছিলেন মিসেস সেন নামে৷অনেক চলচ্চিত্র সমালোচক একটা কথা বলেন নায়িকা যে বক্স অফিসে ঝড় তুলতে পারে সেকথা বোঝাতে তিনি সচেতন ভাবে উত্তমকুমার ছাড়াও অন্য নায়কদের সঙ্গে ছবি করেছেন৷ অনবদ্য দুটি ছবি তৈরি হয় ‘সাত পাকে বাঁধা’,ও ‘উত্তর ফাল্গুনী’৷ হিন্দিতে অভিনয় করেছেন ‘দেবদাস’,’মমতা’,’আঁধি’র’মত ছবি৷ সুচিত্রা সেন অভিনয় শিখে আসেন নি,ন্যাচারাল অভিনেত্রী তিনি ছিলেন না ,এই অনুযোগ অনেক চলচ্চিত্র সমালোচক করেন৷

সুচিত্রা সেন সচেতন ভাবে প্রমান করতে চেয়েছিলেন উত্তমকুমার ছাড়াও সুচিত্রা সেন নায়িকা হয়ে বক্স অফিসে ঝড় তুলতে পারে,কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের মত প্রবাদপ্রতিম চিত্র পরিচালক উত্তমকুমার কে দিয়ে ‘নায়ক’ ছবি করলেও সুচিত্রা কে নিয়ে কোনওদিন কোনও ‘নায়িকা’ ছবি তৈরি হয় নি৷পাশাপাশি একথা অস্বীকার করা যায় না বাংলা সিনেমায় সুচিত্রা সেন একমাত্র অভিনেত্রী যিনি চিরকালের মহানায়িকা যাকে ‘মিসেস সেন’ বলে সম্মান দিয়েছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি৷

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *