সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
মীরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট পৌর এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের পালটাপালটি হামলায় ১০ বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ দুপক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং শিশু ও রয়েছেন। এছাড়া ৫ বিএনপি নেতার ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ভাঙচুর, মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। আহতদের মধ্যে ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরস্পর অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যে জানা গেছে, প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্বের জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বারইয়াহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন লিটন ও বর্তমান সভাপতি দিদারুল আলম মিয়াজীর লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় হামলা পালটা হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীরা বারইয়াহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈনউদ্দিন লিটন, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জসিম উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক সাইদুল ইসলাম মামুন, যুবদল নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু এবং মনজুর হোসেন সুমনের বাড়ির দরজা জানালা, কাচের সব গ্লাস, আসবাবপত্র, ফার্নিচারসহ ঘরের সব সরঞ্জাম ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়।
লিটনের ঘরের দরজায় থাকা যুবদল কর্মী সুমনের মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ সময় হামলাকারীরা কিছু নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ও নিয়ে যাবার অভিযোগ জানায় গৃহকর্ত্রীরা। ওই ঘটনার পর রাত ১টা নাগাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মীরসরাই উপজেলার সেনাবাহিনীর টিম ও জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, প্রতিপক্ষরা আমাদের যুবদল নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলুকে (৩৮) পিটিয়ে আহত করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এরপর আবার বিনা কারণে চয়েস চালক জয়নাল আবেদীন (৫৫), ইমাম উদ্দিন (৩০), মনজুর হোসেন সুমন (৩০), আমার বৃদ্ধ চাচী মনোয়ারা বেগম (৬০) ও অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রাইসা আক্তারকে (৩০) আঘাত করে গুরুতর আহত করে। ওরা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিএনপি নেতা দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, আমার ছোট ভাই ইকবাল হোসেন মিয়াজী (৩৮) ও আমার উপর হামলার কারণেই ঘটনার সূত্রপাত। পর পর হামলার জন্য নেতাকর্মীরা আর শান্ত থাকতে পারেনি বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ওরা আমার ভাইকে এত বেশি জখম করেছে যে সে এখন চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় আছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিপক্ষরা আমার ছোটভাইসহ মিনহাজ উদ্দিন টিটু (৩৩), ঝুমন (৩২), বাদশা (২২), রিয়াজ (২৪) ও নোমানকে (২৪) পিটিয়ে আহত করেছিল।
রাত ১২টায় ৫ বিএনপি নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর ও হামলার বিষয়ে দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, আমি আমার ভাই ও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাই। রাতের ঘটনা পরে জেনেছি। আমার ভাইকে পিটিয়ে আহত করলে ও এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে রাতে হামলার শিকার জসিম উদ্দিনের স্ত্রী আসমা আক্তার মিলি (৩৫) ও বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম (৬০) বলেন, রাতে অতর্কিত এসে এমনভাবে হামলা করেছে আমাদের ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে, ঘরের বেড়া, কাঠগুলো ও কুপিয়ে রেখে গেছে। আমাদের আঘাত করাসহ এতিম শিশু জুলেখার (১০) গলাও টিপে ধরেছে। মধ্যযুগীয় এমন বর্বরতার বিচার চান বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম।
মাঈন উদ্দিন লিটনের পিতা প্রবীণ বিএনপি নেতা খায়েজ আহমদ বলেন, বাজারে কি হয়েছে তার জবাব আবার হাটেবাজারেই হতো। কিন্তু আমার বাড়িতে এভাবে কখনো আওয়ামী লীগের কেউ কখনো ভাঙচুর করেনি। নারী-পুরুষ সবাইকে এভাবে মেরে ধরে আসবাবপত্র, দরজা জানালা ভেঙ্গে দেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজের বিচার চাই সেনাবাহিনী এবং থানা পুলিশের কাছ থেকে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী এবং উক্ত ঘটনাস্থল বারইয়াহাট এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ঘটনাগুলোই নিন্দনীয়। আমরা জেলা ও উপজেলার নেতারা এ বিষয়ে সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, খবর পেয়ে রাতেই সেনাবাহিনীসহ আমরা ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, পালটা হামলা না ঘটার জন্য উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে ও জানান তিনি।