সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
সহস্র শহিদ ছাত্রজনতার রক্তস্নাত বিজয় যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন গুমের শিকার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আজ থেকে জুলুমের অবসান হোক। কেউ কারো ওপর নির্যাতন করতে পারবে না।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় পেকুয়া চৌমুহনী গোল চত্বরে পেকুয়া উপজেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত এক বিশাল গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর তিনি নিজ এলাকায় আগমন উপলক্ষে স্থানীয় বিএনপি তাকে এই গণসংবর্ধনা দেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এখনো চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি নাই। আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সেইদিন করবো যেই দিন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক একটি শক্তি বাংলাদেশে সরকার গঠন করবে। যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদেরকে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউ স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সালাহউদ্দিন আহমেদের সহধর্মিণী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল, যুবদল নেতা কামরান জাদিদ মুকুট, স্বেচ্ছাসেবক দলের এহেছান উল্লাহসহ স্থানীয় নেতারা।
এর আগে বুধবার বিকালে কক্সবাজারের চকরিয়ায় শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাসটার্মিনাল মাঠে উপজেলা বিএনপি উদ্যোগে সালাহউদ্দিন আহমেদকে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ফখর উদ্দিন ফরাজির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে আইনের শাসন কায়েম করা হবে। সব শহিদদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করা হবে। সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। এ দেশকে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণ করা হবে। এদেশে আওয়ামী লীগের নামে কোনো রাজনীতি হবে না। গণহত্যার দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা হলেও তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী আদালতে শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিবাদী সরকারের সবার বিচার করা হবে, কাউকে ক্ষমা করা হবে না। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের মানুষ একটা বিচার দেখেছিল, আওয়ামী লীগ সেখান থেকে শিক্ষা নেয়নি, কোনো দিন শিক্ষা নেবেও না। আবার যদি আওয়ামী লীগ ভোট চাইতে আসে, সেটা এদেশের জনগণ মেনে নেবে না।
উল্লেখ্য, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন কালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক পরবর্তী গুম হন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ। ৬২ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের গলফ কোর্স ময়দান থেকে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন আহমদ খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানে থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান তিনি এবং আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১১ আগস্ট দেশে ফেরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বুধবার দুপুরে ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদ। তাকে বরণ করেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কক্সবাজার থেকে রামু, ঈদগাঁও হয়ে চকরিয়ায় প্রবেশের সময় প্রতিটি জায়গায় হাজার হাজার জনতা হাত নাড়িয়ে ও ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্বাগত জানান প্রিয় নেতাকে।