সুবর্ণবাঙলা আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
ইয়েমেনে ভারতীয় এক নার্সকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে। গত সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) নিমিশা প্রিয়া (৩৬) নামে ওই নারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদন করেন ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি। আগামী এক মাসের মধ্যেই এই সাজা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নারী নিমিশা প্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত
এ খবরে ভারতে বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু কে এই নিমিশা? কোন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে তার?
ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালার পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা পেশায় নার্স। স্বামী টমি থমাস এবং মেয়েকে নিয়ে ইয়েমেনে থাকতেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের এক বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন নিমিশা।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০১৪ সালে তার স্বামী ও ১১ বছরের কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা ইয়েমেনেই থেকে যান। তারা আর ইয়েমেনে ফিরতে পারেননি। কারণ যুদ্ধের কারণে তাদের আর ভিসা দেয়া হয়নি।
নিমিশার স্বপ্ন ছিল নিজের একটা ক্লিনিক খোলা। ২০১৪ সালেই তালাল আব্দো মাহদি নামে এক ইয়েমেনি নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। মাহদি তাকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। কারণ আইন অনুযায়ী, ইয়েমেনে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদারের দরকার।
পরিকল্পনা মতো ২০১৫ সালে দুজন মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন। কিন্তু কিছুদিন পরই দুই অংশীদারের মতবিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে মাহাদিকে হত্যা করেন নিমিশা। এরপর এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে তার লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দেন।
এ ঘটনার পর ওই মাসেই ইয়েমেন থেকে পালানোর চেষ্টা করেন নিমিশা। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। সেই থেকে ইয়েমেনের কারাগারে বন্দি তিনি। মাহদিকে হত্যার দায়ে ২০১৮ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ইয়েমেনের আদালত। দেয়া হয় মৃত্যুদণ্ড।
এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন নিমিশা। তার বক্তব্য, মাহাদি তার ওপর অত্যাচার চালাতেন। তার পাসপোর্ট পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছিল। ফলে আত্মরক্ষার তাগিদেই মাহাদিকে হত্যা করতে হয়েছিল। কিন্তু ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট তার এই আবেদন খারিজ করে দেন। বহাল রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড।
এই পরিস্থিতিতে নিমিশার প্রাণ বাঁচানোর একমাত্র উপায় ‘ব্লাড মানি’। ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে বা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে হত্যাকারীকে প্রাণভিক্ষা দিতে পারে। এখন সেই চেষ্টাই শুরু করেছে নিমিশার পরিবার।
সমস্যা হল, গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইয়েমেন থেকে কূটনৈতিক মিশন তুলে নেয় ভারত। ফলে দেশটিতে এখন ভারতের কোনো প্রতিনিধি নেই। ভারতীয়দের ইয়েমেনে যেতেও দেয়া হয় না।
তবে মেয়ের জীবন বাঁচাতে নিমিশার মা ইয়েমেনে যাওয়ার জন্য ভারতীয় আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়, তাকে ইয়েমেন পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, নিমিশা ও তার পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হবে। প্রয়োজনে ইয়েমেনের সরকারের সঙ্গেও কথা বলবে ভারত সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার ওয়াকিবহাল। নিমিশার পরিবারও সব রকম চেষ্টা করেছে। সরকার যথাসাধ্য সাহায্য করছে।’
সহায়তার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে নিমিশার পরিবারকে প্রায় ২০ হাজার ডলার দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই টাকা দিয়ে নিমিশার জন্য আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে। সেই আইনজীবী আরও ২০ হাজার ডলার চেয়েছেন মাহাদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্য।