সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
রাওয়ালপিন্ডিতে সকালে যা ঘটেছে তা একেবারেই অভাবনীয়। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে উইকেটটা একটু ঝামেলাপূর্ণ তা আগেই বোঝা গেছে। কিন্তু রবিবার ম্যাচের তৃতীয় দিন সকালে বাংলাদেশের ব্যাটাররা এভাবে অসহায় হয়ে পড়বেন তা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করা যায়নি। কারণ এই ভেন্যুতে আগের টেস্টেই দলীয় রানের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
অথচ দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশী ব্যাটাররা মহা ফাঁপড়ে পড়েন পাকিস্তানি পেসারদের দাপুটে বোলিংয়ে। মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর সেই ধ্বংসস্তূপে লিটন কুমার দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ সপ্তম উইকেটে অবিশ^াস্য ব্যাটিংয়ে সবাইকে চমকে দিয়ে যোগ করেন ১৬৫ রান। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি।
রেকর্ড গড়া এই জুটি ভেঙেছে মিরাজ ৭৮ রানে সাজঘরে ফেরাতে। তাকে আউট করে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেন তরুণ পেসার খুররম শাহজাদ। তবে লিটন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৩৮ রানে থামেন। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ২৬২ রানে শেষ হয়। ১২ রানে এগিয়ে থাকে পাকরা।
আরেকটি রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ। কিন্তু পিন্ডির উইকেট সকালে পেস সহায়ক হবে এটাই চিরাচরিত। আগের দিনও তাসকিন আহমেদের বোলিং দেখে সেটি স্পষ্ট হয়েছে। ম্যাচের তৃতীয় দিন সকালে মির হামজা আর শাহজাদের পেসে ভয়ানক সমস্যায় পড়েন বাংলাদেশের টপঅর্ডাররা। আগের দিনের বিনা উইকেটে ১০ রানে শুরু করা বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৬! অবিশ^াস্য এই ধস পেসারদের বাড়িত বাউন্স এবং দারুণ সুইং বড় প্রভাব ফেলে। দিনের মাত্র ৫৭ বল থেকে ১৬ রান যোগ করতেই এই উইকেটগুলো হারিয়ে সর্বনি¤œ রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
এরপরই প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান লিটন ও মিরাজ- খেলেন অবাক করা ইনিংস। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে বীরের মতো লড়াই করে তারাই উল্টো কোণঠাসা করে দেন ত্রাসোদ্দীপক পাক পেসারদের। তারা লাঞ্চ বিরতিতে গেছেন ৬ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন মিরাজ। তবে লিটন ছিলেন সতর্ক। তবে লাঞ্চ বিরতি শেষে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন লিটন। তাকে রানে ছাড়িয়ে যাওয়া মিরাজকে ছুঁয়ে ফেলেন। উভয়ে অর্ধশতক পেয়ে যান।
কিন্তু চা বিরতির কিছুক্ষণ আগেই শাহজাদের পঞ্চম শিকার হন মিরাজ। তিনি ১২৪ বলে ১২ চার, ১ ছক্কায় ৭৮ রানে ফিরে যান। ফলে ১৬৫ রানের জুটি ভেঙে যায়। এটিই ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর সর্বোচ্চ রানের জুটি সপ্তম উইকেটে। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এটাই বিশ^রেকর্ড। তবে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ১৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ১০০ রানের জুুটি গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এনক্রুমাহ বোনার ও জশুয়া ডা সিলভা। সবচেয়ে কম রানে ৬ উইকেট হারানোর পর শতরানের জুটির তালিকায় সেদিক থেকে লিটন-মিরাজ দুই নাম্বারে।
৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট পড়ার পর সপ্তম উইকেটে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দেড়শ’ রানের জুটি এটিই। আগের রেকর্ডটি ছিল আব্দুল রাজ্জাক ও কামরান আকমলের। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করাচিতে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ১১৫ রান যোগ করেছিলেন পাকিস্তানের ওই দুই ক্রিকেটার। তবে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর সেরা জুটি ছিল ৮৪ রানে, সেটি ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের মইন খান ও সেলিম মালিক ১৯৯৯ সালে করেছিলেন। মিরাজ গত ৫ বছরে এদিন মিলিয়ে ২৫ ইনিংসে ৭১১ রান করেছেন ৮ নম্বরে ব্যাট করে।
একটি সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৪টি হাফ সেঞ্চুরি। এই সময়ের মধ্যে তিনিই বিশে^ সর্বাধিক রান করেছেন ৮ নাম্বার ব্যাটার হিসেবে। গড় ৩০.৯১! দ্বিতীয় স্থানে ভারতের রবিচন্দ্রন অশি^ন ২৭ ইনিংসে ২১.৪৮ গড়ে ৫৮০ রান করে। তিনি সাজঘরে ফিরলেও ততক্ষণে বাংলাদেশ ১৯১ রান তুলেছে স্কোরবোর্ডে। তখন ৮২ রানে ব্যাট করছিলেন। এরপর তাসকিন ১ রানেই ফিরে গেলে লিটন আরো আগ্রাসী হয়েছেন।
হাসানও মাটি কামড়ে রক্ষণাত্মক খেলে সঙ্গ দিয়েছেন, ফলে নবম উইকেটে ২৪.৫ ওভার তারা একসাথে থেকে ৬৯ রান তোলেন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পান লিটন। ওয়ানডে ও টি২০ ফরম্যাটে বাজে ফর্মে থাকলেও টেস্টে নিয়মিতই ভালো করছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তবে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে ১৪১ রানের ইনিংস খেলার পর আর শতক পাননি। মাঝের ১৮ ইনিংসে ৫টি অর্ধশতক পেয়েছেন। এবার আরেকটি শতক পেলেন। বাংলাদেশ দু’শ’ পেরিয়ে লিড নেওয়ার পথে এগিয়ে যায়।
এরপর আক্রমণাত্মক লিটন সালমান আলী আগাকে তুলে মারতে গিয়ে সাজঘওে ফেরেন। তিনি ২২৮ বলে ১৩ চার ও ৪ ছক্কায় ১৩৮ রানে আউট হন। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং দেশের বাইরে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস। এরপর ২৬২ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস একই ওভারে নাহিদ রানা এলবিডব্লিউ হলে। তাই ১২ রানে পিছিয়েই থাকে বাংলাদেশ। তবে দিনশেষে ৯ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়েছে পাকরা, তাই স্বস্তি বাংলাদেশের তাঁবুতে।