সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
রাশিয়ার অভ্যন্তরে আকস্মিক আক্রমণে গোটা বিশ্বকেই অবাক করে দিয়েছিলো ইউক্রেন। যেন হাওয়ায় ভাসছিলো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। কিন্তু রাতের ঘুম এখন হারাম হওয়ার যোগাড় তার। খেল দেখাতে শুরু করেছে ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী।
ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়া গিয়ে বসে থাকলেও রুশ বাহিনী প্রতিদিন ইউক্রেনের ডনবাসের নতুন নতুন এলাকা দখল করছে। এটিকে অনেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির সামরিক কৌশল বলেও অভিহিত করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে ইউক্রেন বাহিনী যখন রুশ ভূখন্ড খুব অল্প জায়গা দখল করতে তুমুল লড়াই করছে তখন রাশিয়ার সামরিক বাহিনী প্রায় বিনা বাধায় কাঙ্খিত ডনবাস অঞ্চলে দখলের পথে এগিয়ে চলছে।
কিয়েভের দাবি কুরস্ক অঞ্চলের এক হাজার কিলোমিটারের বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। এই আগ্রাসনের জন্য ইউক্রেনকে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দেয় পশ্চিমা দেশগুলো। মূলত যুক্তরাষ্ট্র তথা ন্যাটোর বুদ্ধিতেই ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরি হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
এখন কুরস্ক আগ্রাসনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এর সফলতা নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। কেননা এমন মরিয়া সিদ্ধান্তে যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে কিয়েভ।
রুশ অঞ্চল দখলের কৃতিত্ব নিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিজ সেনাদের মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা চালালেও ইউক্রেনের অভ্যন্তরে থেমে নেই পুতিনের সেনারা। বেশ কয়েকমাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের দিকে আরও অগ্রসর হয়েছে মস্কোর সামরিক বাহিনী। দখলে নিয়েছে কিরোভো গ্রাম।
পতনের মুখে রয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর রসদ ও অস্ত্র সরবরাহের ঘাঁটি থাকা গুরুত্বপূর্ণ পোকরোভস্ক শহর। দোনেৎস্ক অঞ্চলে রেল রুটে যুদ্ধের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য ইউক্রেনের কাছে পোকরোভস্ক অঞ্চলটি দ্যা রোড অব লাইফ নামে পরিচিত।
শহরটি দখল করে নিলে পূর্বাঞ্চলে ধসে পড়বে ইউক্রেনের প্রতিরোধ। এর মাধ্যমে পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চলই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসার সামিল হবে বলে জানিয়েছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিস্থিতিতে কুরস্ক আক্রমণের মাধ্যমে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী হিসেবে চরম গোলমাল করে ফেলেছে বলে জানাচ্ছেন কিয়েভের সমালোচকরা। কুরস্কের কিছু অঞ্চল দখলের তৃপ্তি নিয়ে ইউক্রেনকে ব্যস্ত রাখা বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতা প্রেসিডেন্ট পুতিনের আরও একটি হিসেবি চাল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কয়েক স্তরের প্রতিরক্ষায় পোকরোভস্ককে দুর্গের মতোই এতদিন আগলে রেখেছে ইউক্রেন। তবে কিয়েভের শক্তিশালী সেনা ইউনিটগুলো কুরস্ক আক্রমণ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রতিরক্ষা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে পোকরোভস্কের। এমনকি কুরস্কে ইউক্রেনের হামলার পর সম্মুখ সারি থেকে খুব বেশি সেনাকেও অঞ্চলটিতে সরিয়ে আনেনি মস্কো।
দোনেৎস্কে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের মেরুদণ্ড বলে পরিচিত পোকরোভস্ক শহরটি এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসা এখন সময়ের ব্যাপার। আর এতে পুতিনের বুদ্ধি বাজিমাত হচ্ছে বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
তবে এসব মানতে নারাজ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, কুরস্কের শতাধিক গ্রাম দখল মস্কোর বিরুদ্ধে কিয়েভের যুদ্ধ জয়ের বড় এক পরিকল্পনার অংশ। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কুরস্কে ইউক্রেনের আগ্রাসন স্তিমিত হয়ে এসেছে।