সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
ইউক্রেনে গণহত্যার অভিযোগে অনেকদিন থেকেই রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের মাথার উপর ঝুলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তবে এনিয়ে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
আইসিসির পরোয়ানা মাথায় নিয়েই মঙ্গলবার মঙ্গোলিয়া সফরে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এবারই প্রথম আইসিসির কোনো সদস্য দেশ সফরে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তবে পুতিনকে গ্রেপ্তার করা দূরের কথা, সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছে মঙ্গোলিয়া।
বিবিসি ও আল জাজিরা জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গোলিয়াতে পৌঁছেছেন। আমন্ত্রণকারী দেশটি পুতিনের ওপর থাকা আইসিসির প্রেপ্তারি পরোয়ানা উপেক্ষা করায় মঙ্গলবার নির্বিঘ্নে এই সফর শুরু করেন তিনি। মঙ্গোলিয়াতে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন পুতিন।
উলানবাটোর বিমানবন্দরে পুতিনকে দেয়া হয় রাজসিক সংবর্ধনা। রাজধানীর চেঙ্গিস খান স্কয়ারে দু’দেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে। যদিও, পুতিনের সফর শুরুর আগেরদিন অল্প কিছু মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলো। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘যুদ্ধাপরাধী পুতিনকে তাড়িয়ে দাও’।
পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে মঙ্গোলিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইসিসি, ইউক্রেন, পশ্চিমা কয়েকটি দেশ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। ইউক্রেনে ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। এরপর দেশটি থেকে শিশুদের বেআইনিভাবে রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি।
আদেশ মানার বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর বাধ্যবাধকতার কথা গত সপ্তাহে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আইসিসি। মঙ্গোলিয়া যেহেতু আইসিসির সদস্য, তাই আদেশ মেনে পুতিনকে গ্রেপ্তারে দেশটির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে দেশটি যদি এ আদেশ না মানে, সেক্ষেত্রে তেমন কিছু করার নেই।
পুতিনের একজন মুখপাত্র গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, সফরকালে রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘গ্রেপ্তার’ ভয়ে থাকতে হবে বলে ক্রেমলিন মনে করে না। আর, এই পরোয়ানা সম্পর্কে শুরু থেকেই নীরবতা পালন করে আসছে মঙ্গোলিয়া সরকার। তখন সবাই ধরেই নিয়েছিলো উলোনবাটরে পুতিতের কোন সমস্যা হবে না।
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের মতো অবস্থানে নেই মঙ্গোলিয়া। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে মঙ্গোলিয়ার ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। আর চীনের সঙ্গে রয়েছে কৌশলগত বাণিজ্য সম্পর্ক।
সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে মঙ্গোলিয়া সোভিয়েতভুক্ত ছিল। তবে সোভিয়েতের পতনের পর থেকে মঙ্গোলিয়া বেইজিং ও মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছে।
রাশিয়াকে থামানো সম্ভব নয়: পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার দেশের সীমান্তে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অনুপ্রবেশ রাশিয়ার যুদ্ধে অগ্রগতি থামাতে পারবে না। সোমবার সাইবেরিয়ায় শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তার দেশের সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অনুপ্রবেশ ব্যর্থ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যার কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়। এ ছাড়া অঞ্চলটির একটি মসজিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার নতুন করে ইউক্রেনের তিনটি গ্রাম দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া।