হামলাকারীর গাড়িতে ছিল আইএসের পতাকা ও আগ্নেয়াস্ত্র

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি চালিয়ে হামলা
সুবর্ণবাঙলা ডিজিটাল ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলেন্স শহরে নববর্ষ উদযাপন করা মানুষের ভিড়ের মধ্যে দ্রুতগতিতে গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৫ জনের মতো। দেশটির স্থানীয় সময় বুধবার রাত সোয়া তিনটার দিকে ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার পার্টি এলাকার বুরবোন স্ট্রিটে এ ঘটনা ঘটে। খবর বিবিসির।

দেশটির ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই একে একটি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে তদন্ত করছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউ অরলেন্স শহরের এই স্থানটি নাইটলাইফের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। ঘটনার সময় ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে রাস্তাটি নববর্ষ উদযাপনকারী পর্যটক ও স্থানীয়দের দিয়ে পূর্ণ ছিল।

এফবিআই জানিয়েছে, ট্রাকটির চালক ছিলেন ৪২ বছর বয়সী সামসুদ্দিন জব্বার। যিনি একজন মার্কিন নাগরিক এবং টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ছিলেন।

সিবিএস নিউজ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানায়, চালক ব্যারিকেড ভেঙে জনতার ভিড়ের মধ্যে প্রচণ্ড গতিতে পিকআপ তুলে দেয় এবং ট্রাক থেকে নেমে গুলি করা শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানকার পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি চলাকালে সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিহত হন।

আহতদের মধ্যে দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা সন্দেহভাজন ব্যক্তির গুলিতে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এফবিআই। তবে তারা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন।

এফবিআই জানিয়েছে, হামলায় জড়িত ওই পিক আপের ভেতর থেকে ইসলামিক স্টেটের পতাকা পাওয়া গেছে। হামলাকারীর কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কিনা বা তিনি কোনো ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ সঙ্গে জড়িত কিনা, তা তদন্ত করা হচ্ছে।

মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর থেকে জানা গেছে, ওই পিকআপটি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এবং পাইপ বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

লুইজিয়ানা স্টেট পুলিশের বরাতে এপি জানায়, এগুলো কুলারের ভেতরে লুকানো ছিল এবং রিমোট দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য তারের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। সেখান থেকে একটি রিমোট কন্ট্রোলও পাওয়া যায়। পরে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।

কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে যে জব্বার একাই এই হামলা চালিয়েছে নাকি কেউ তাকে সহায়তা করেছে। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের ধারণা হামলাকারী একা ছিলেন না।

যদিও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখনো সেই সহযোগীদের বিষয়ে কোনো প্রমাণ প্রকাশ করেনি। তদন্তকারীরা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে বোঝার চেষ্টা করছেন যে কেউ এই ডিভাইসগুলো স্থাপন করতে সাহায্য করেছে কিনা।

তবে সিবিএস জানিয়েছে, সেই ফুটেজে কেবলমাত্র উপস্থিত দর্শকদেরই দেখা গেছে।

এফবিআই জানিয়েছে যে, সাদা ফোর্ড এফ-১৫০ লাইটনিং মডেলের পিকআপটি ভাড়া করা বলে মনে হচ্ছে এবং এটি কীভাবে জব্বারের হাতে এসেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পিকআপটির সামনের অংশে পুরো দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সিবিএস জানিয়েছে, জব্বার নিউ অরলেন্সে একটি এয়ারবিএনবি ভাড়া করেছিলেন। বুধবার সেখানে আগুন লাগে, তবে এই হামলার সঙ্গে এই আগুন লাগার ঘটনা সম্পর্কিত কিনা তা স্পষ্ট নয়।

তারা আরও জানিয়েছে, নিউ অরলেন্সের ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার এলাকায় যেখানে হামলা হয়েছিল সেখানে সম্ভাব্য ইম্প্রোভাইজড বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছে। বুধবার রাতেই নিউ অরলেন্স শহরে ‘দ্য সুগার বোল’ নামে পরিচিত বার্ষিক কলেজ ফুটবল খেলার আয়োজন চলছিল।

এ বছর এই প্রতিযোগিতায় ছিল ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেম দল।

এ উপলক্ষ্যে সারা দেশ থেকে মানুষজন ওই শহরে এসে জড়ো হয়েছিলেন। তার মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল। এদিকে, এই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহরে ট্রাম্প হোটেলের বাইরে একটি টেসলা সাইবারট্রাক বিস্ফোরিত হয়, এতে চালক নিহত হন এবং সাতজন আহত হন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন যে এই বিস্ফোরণের সঙ্গে নিউ অরলেন্সে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা, তবে এই মুহূর্তে জানাবার মতো কিছু তথ্য মেলেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বললেন

এক প্রত্যক্ষদর্শী ভিড়ের মধ্যে গাড়িহামলার পরের কিছু ভয়াবহ দৃশ্য দেখার কথা জানিয়েছেন। হুইট ডেভিস বিবিসিকে বলেন, আমরা সন্ধ্যার পর থেকে বোর্বন স্ট্রিটের একটি পানশালায় ছিলাম। প্রথমে আমরা গুলি বা গাড়ি ধাক্কার কোন শব্দ শুনিনি কারণ তখন খুব জোরে গান বাজছিল, হঠাৎ দেখি মানুষজন ছোটাছুটি করছে এবং টেবিলের নিচে লুকাচ্ছে। মনে হলো কেউ হয়তো এলোপাতারি গুলি চালাচ্ছে।

পুলিশ পরে তাদেরকে ওই পানশালার ভেতরেই আটকে রাখে এবং যখন তারা বের হন। দেখতে পান রাস্তায় হতাহতের দেহগুলো পড়ে আছে।

নিউ অরলেন্সে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি কাজ করা একজন হোটেল কর্মচারী বলেছেন, তিনি স্থানীয় সময় রাত তিনটা ২০ এর ঠিক আগে জোরে শব্দ শুনতে পান। তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের রুমে ছিলাম এবং জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম মাটিতে অনেক দেহ পড়ে আছে। তিনি পিকআপটিকে দ্রুত চালিয়ে যেতে দেখেন এবং নিচে দৌড়ে যান সাহায্য করতে।

তিনি আরও বলেছেন, কিছু লোককে আমরা হোটেলে নিয়ে যাই সাহায্যের জন্য এবং পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট পরে একটি বোমা সতর্কতার খবর আসে এবং তখন হোটেল খালি করা হয়, তিনি বলেন।

সন্দেহভাজন সম্পর্কে যা জানা গেছে

নিউ অরলিন্স হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন সামসুদ্দিন জব্বার টেক্সাসের হিউস্টনে বাস করতেন। তিনি জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

মার্কিন সেনাবাহিনীতে ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মানব সম্পদ ও আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি চাকরিচ্যুত হওয়ার আগে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিলেন।

২০২০ সালে আর্মি রিজার্ভ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি রিয়েল এস্টেটেও কাজ করেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা তার কাছ থেকে ২০২১ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া একটি রিয়েল এস্টেটের লাইসেন্স পাওয়া গেছে।

সামসুদ্দিন জব্বার এর আগে টেক্সাসে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। ২০০২ সালে চুরি এবং ২০০৫ সালে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য তিনি জরিমানা ও প্রোবেশন পেয়েছিলেন।

সিবিএস জানিয়েছে যে তিনি দুইবার বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম বিয়ে ২০১২ সালে বিচ্ছেদ হয় এবং দ্বিতীয় বিয়ে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *