সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮) ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের নেত্রী লায়লা খাতুন ইতির (৪০) বিরুদ্ধে এক কৃষকের গরু চুরি করে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভুড়িভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
গরুর চামড়া ও মাংস জব্দসহ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার সকালে মাদারগঞ্জ উপজেলার জুনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নারী সমাবেশের আয়োজন করে। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভুড়িভোজের আয়োজন করেন মাদারগঞ্জের আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানি রান্নার জন্য গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠেছে।
চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে গোয়াল ঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজ খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আজ শনিবার ভোরে পাশবটি দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।
কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতে-নাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল।
বিষয়টি জানাজানি হলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কর্মী সুমন মন্ডল ও কসাই বজলু প্রামাণিক নামে দুই জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়। আজ শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিএনপি নেতার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনার পর দলীয় কর্মী-সমর্থকরা গা-ঢাকা দিলে তাদের ভুড়িভোজের জন্য রান্না করা বিরিয়ানি স্থানীয়রা লুটপাট করে।
এ ব্যাপারে কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নামে অজ্ঞাত আরও ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮), মিঠু (৪০), জামিউল (৩৫), আব্দুল হাকিম (৩৫), রতন সরদার (৩৮), সুজন (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), সাজা (৫০), বাদল (৩২), ফতু মিয়া (৪০)।
মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আল-মামুন জানান, গরু চুরির অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে