সুবর্ণবাঙলা ডিজিটাল ডেস্ক
‘চীনের সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া ইউনূস সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে’- এমন একটি তথ্য গত বছর আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ছড়াচ্ছে। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া (ঢরহযঁধ) বাংলাদেশের সংবাদ বেশ গুরুত্ব সহকারেই প্রকাশ করে। রাজনীতির খবর ছাড়াও বাংলাদেশের শীত, বাণিজ্যমেলা এসব ইভেন্টও বাদ যায় না। অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর সেসব খবরও গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশ করেছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘ইউনূস সরকার অবৈধ’, এমন কোনো সংবাদ তারা প্রকাশ করেনি। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী এ প্রতিষ্ঠান।
ফ্যাক্টওয়াচ বলছে, দেশের মূলধারার গণমাধ্যমও সিনহুয়ার বরাতে এ রকম কোনো খবর প্রকাশ করেনি। নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীন এই তথ্যটি ছড়ানো হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ সংগত কারণেই এটিকে ‘মিথ্যা’ চিহ্নিত করছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া গুজবের সঙ্গে তথ্যসূত্র হিসেবে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ নিউজ ২৪/৭’ নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল পাওয়া যায়। সেখানে সিনহুয়া নামে একটি সংবাদমাধ্যম ইউনূস সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, এ ধরনের বক্তব্য আছে। তবে সেখানে দাবি করা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এই তথ্যের কোনো ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আবারও অনুসন্ধানে, উল্লিখিত সিনহুয়া নামক সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে জানা যায়, এটি মূলত রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি সংবাদমাধ্যম। এই সংবাদমাধ্যমের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগে নিয়মিত বাংলাদেশের খবর প্রকাশিত হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিনহুয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালের গত ৭ আগস্ট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৯ আগস্ট এ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘চীন দেখতে পেয়েছে, বাংলাদেশ একটি অন্তর্র্বতী সরকার গঠন করেছে এবং আমরা একে স্বাগত জানাই। চীন কঠোরভাবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং বাংলাদেশি জনগণের স্বাধীনভাবে নির্বাচিত উন্নয়নের পথকে সম্মান করি।’
২০২৪ সালের ৯ আগস্ট দ্য ডেইলি স্টার তাদের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারকে চীন কখনো অবৈধ বলেনি বরং তাদের প্রতি এক প্রকারের সমর্থন দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
তাই যেখানে চীন সরকার বাংলাদেশের এই সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে, সেখানে তার রাষ্ট্রীয় একটি সংবাদমাধ্যমে সেই সরকারকে অবৈধ বলবে, বিষয়টি যৌক্তিক নয়। তাই বাংলাদেশে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সিনহুয়ায় এখন পর্যন্ত এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি; যেখানে ড. ইউনূস সরকারকে অবৈধ বলে দাবি করেছে তারা। বরং বাংলাদেশ নিয়ে স্বাভাবিক কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে।
যেমন গত ১৬ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর প্রকাশ করেছে। সেখানে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং সেটি শীত নিয়ে।
সুতরাং বিষয়টি স্পষ্ট যে উল্লিখিত এই সংবাদমাধ্যম ইউনূস সরকারকে অবৈধ বলে কোনো খবর প্রকাশ করেনি। এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাই সংগত কারণে ফেসবুকের এসব পোস্টকে ‘মিথ্যা’ চিহ্নিত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।