সামরিক শক্তিতর অবস্থানে আমেরিকা,রাশিয়া চীন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

আন্তর্জাতিক

সুবর্ণাবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বের সামরিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনও সেরা। এবার ২০২৫ সালে প্রকাশিত প্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেস্কে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নজরে পড়ার মতোন। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের সামরিক সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে। ২০২৫ সালের র‌্যাংকিং সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তি মূল্যায়ন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একক আধিপত্য ধরে রেখে তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া, এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ ভারত তালিকার চতুর্থ স্থান দখল করেছে। মিয়ানমারকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ৪০ তম স্থানে। আর মিয়ানমার ৪৯তম স্থানে।

শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা:
১. যুক্তরাষ্ট্র (চড়বিৎওহফবী: ০.০৭৪৪)
২. রাশিয়া (চড়বিৎওহফবী: ০.০৭৮৮)
৩. চীন (চড়বিৎওহফবী: ০.০৭৮৮)
৪. ভারত (চড়বিৎওহফবী: ০.১১৮৪)
৫. দক্ষিণ কোরিয়া (চড়বিৎওহফবী: ০.১৬৫৬)
৬. যুক্তরাজ্য (চড়বিৎওহফবী: ০.১৭৮৫)
৭. ফ্রান্স (চড়বিৎওহফবী: ০.১৮৭৮)
৮. জাপান (চড়বিৎওহফবী: ০.১৮৩৯)
৯. তুরস্ক (চড়বিৎওহফবী: ০.১৯০২)
১০. ইতালি (চড়বিৎওহফবী: ০.২১৬৪)

বাংলাদেশের অবস্থান
এবারের ইনডেক্সে বাংলাদেশ ৪০তম স্থানে রয়েছে। দেশের চড়বিৎওহফবী স্কোর ০.৬২৭৭, যা এশিয়া অঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বর্তমানে “ফোর্সেস গোল ২০৩০” পরিকল্পনার আওতায় আধুনিকায়নের পথে রয়েছে।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং ধীরে ধীরে র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি করেছে। তবে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ছিল ৩৫তম স্থানে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ৪০তম স্থানে নেমে এসেছে, যার কারণ হতে পারে অন্যান্য দেশের সামরিক আধুনিকায়নে অগ্রগতি বা বাংলাদেশের সামরিক বাজেট ও অন্যান্য ফ্যাক্টরে সীমিত উন্নয়ন। ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই অবস্থান আরও উন্নত করতে পারে।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, মিয়ানমার বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৪৯তম স্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালে ছিল ৪৬ তম।মিয়ানমারের চড়বিৎওহফবী স্কোর হলো ০.৭৫০১, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় মাঝারি পর্যায়ের সামরিক শক্তির ইঙ্গিত দেয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের আঞ্চলিক উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য স্থল সেনা, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে। ২০১০-এর দশকের প্রথমার্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে ছিল। তাদের তুলনামূলক উন্নত সামরিক সরঞ্জাম, বৃহৎ স্থল বাহিনী, এবং আঞ্চলিক প্রভাব মিয়ানমারকে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে রেখেছিল। ২০১৫ সালে মিয়ানমার সামরিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ থেকে ভালো অবস্থানে ছিল।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ৬০টিরও বেশি ফ্যাক্টর বিশ্লেষণ করে এই র‌্যাংকিং তৈরি করে। এর মধ্যে সামরিক কর্মী সংখ্যা, অস্ত্রশস্ত্র, লজিস্টিক সাপোর্ট, অর্থনৈতিক শক্তি এবং ভৌগোলিক অবস্থান অন্যতম। এশিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, এবং ভারত উল্লেখযোগ্য সামরিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক এবং সৌদি আরব শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
ইউরোপে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি ধরে রেখেছে।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সের র‌্যাংকিং সামরিক শক্তির একটি তুলনামূলক চিত্র প্রদান করে। এটি বিভিন্ন দেশের সামরিক সক্ষমতা, প্রতিরক্ষা বাজেট, এবং কৌশলগত সামর্থ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। তবে এটি শুধুমাত্র সরাসরি যুদ্ধের সক্ষমতা নয়, বরং সামগ্রিক সামরিক শক্তির মূল্যায়ন। র‌্যাংকিং দিয়ে যা বোঝায় তা হলো- সামরিক শক্তির তুলনামূলক অবস্থান,
র‌্যাংকিং থেকে বোঝা যায়, একটি দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সামরিক ক্ষেত্রে কতটা শক্তিশালী। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ১ম স্থান বোঝায় যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশের ৪০তম স্থান ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশ একটি মাঝারি স্তরের সামরিক শক্তি। সেনাসংখ্যা: সক্রিয় ও রিজার্ভ সদস্য সংখ্যা। অস্ত্রশস্ত্র: ট্যাংক, ফাইটার জেট, সাবমেরিন, এবং অন্যান্য অস্ত্রের পরিমাণ ও মান। অর্থনৈতিক শক্তি: প্রতিরক্ষা বাজেট এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। লজিস্টিক সাপোর্ট: জ্বালানি সরবরাহ, পরিবহন নেটওয়ার্ক। ভৌগোলিক প্রভাব: সীমানার দৈর্ঘ্য, সমুদ্রতীরবর্তী অবস্থান. আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব
এই র‌্যাংকিং থেকে একটি দেশের আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক প্রভাব বোঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভারত এশিয়ার একটি বড় সামরিক শক্তি, যা চীন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখে। সামরিক আধুনিকায়ন ও প্রবণতা, র‌্যাংকিংয়ের ওঠানামা একটি দেশের সামরিক উন্নয়ন বা অবনতির চিত্র তুলে ধরে। যেমন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আধুনিক সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ যুক্ত করেছে, যা র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি এনেছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমার পিছিয়ে পড়েছে। মূলত একটি দেশের নিরাপত্তা নীতি এবং কৌশল বুঝতে এটি কাজ করে।প্রতিরক্ষা বাজেট এবং সামরিক আধুনিকায়নের অগ্রাধিকার নির্ধারণে সহায়ক, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সহযোগিতা মূল্যায়নে সহায়তা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *