অনলাইন ডেস্ক
ব্রাজিলের দুর্র্ধষ মাফিয়ার মুঠোয় চলে যাচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজন। ভেতর-বাইরের চারপাশ থেকে একেবারে গিলে খাচ্ছে পৃথিবীর ২৫ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেওয়া বনরানিকে। কাঠ-খনি-জমির মোহে মাফিয়াদের হাট বসেছে আমাজনে।
অভয়ারণ্য এখন মাদকসাম্রাজ্য। অপরাধের অভয়াশ্রম! শক্ত প্রতিরোধের অভাবে অপ্রতিরোধ্য এসব মাফিয়া গোষ্ঠীর বাড়-বাড়ন্ত দাপট আর ক্ষমতার লড়াইয়ে দিন দিন হত্যা-অপহরণসহ নানান ধরনের সহিংস কাণ্ড শুধু বাড়ছেই। কমার লক্ষণ নেই।
দেশটির সাবেক এক পুলিশপ্রধান আলেকজান্দ্রে সারাইভার বরাতে শুক্রবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রভাবশালী এসব মাফিয়ারা আমাজনে অবৈধ খনি ও স্বর্ণ উত্তলন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পাচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। একসময় আমাজন পুরোটাই মাফিয়াদের দখলে চলে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সারাইভা তার পুলিশি জীবনে ২০১১-২০২১ সাল পর্যন্ত আমাজন অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন। আমাজনকে রিও ডি জেনেরিও’র সঙ্গে এর তুলনা করে তিনি বলেন, ‘আমাজন অঞ্চলে মাদক পাচারকারী মাফিয়াদের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ রিও ডি জেনেরিওতে চলা মাদক সংঘাতের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’
হত্যার মতো জঘন্য কাজেও যুক্ত এই মাফিয়ারা। আমাজনে সংঘটিত অপরাধ গোষ্ঠীর অগ্রগতি গত বছর প্রকাশ করা হয়েছিল। জাভারি উপত্যকায় পেরেরা ও ফিলিপসের হত্যার মাধ্যমে এটি প্রকাশ করা হয়েছিল।
আমাজনের অপরাধচিত্র ও তার মারাত্মক প্রভাব তুলে ধরে একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে করেছে দেশটির একটি এনজিও সংস্থা ‘ ব্রাজিলিয়ান ফোরাম অন পাবলিক সেফটি’। যার মাধ্যমে ব্রাজিলের আমাজনের নয়টি রাজ্যের প্রাণহানি সহিংসতার কথা জানা যায়। যার অপরাধের হার গত বছরের বাকি দেশের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি ছিল। ব্রাজিলের দুটি সবচেয়ে শক্তিশালী অপরাধ গোষ্ঠী-সাও পাওলোর পিসিসি (ফাস্ট কেপিটাল কমান্ড) ও রিওর সিভি (রেড কমান্ড) নাম উঠে এসেছে। যারা এখন নয়টি রাজ্যে কাজ করছে বলে জানা যায়। পাবলিক সেফটি ফোরামের প্রেসিডেন্ট রেনাটো সার্জিও লিমা বলেছেন, ‘মাদক গোষ্ঠীর আগমন পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ করে তুলেছে, যার ফলে আমাজন হত্যার হার বাড়ছে। লিমা অনুমান করেছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ৪০ শতাংশ অবৈধ লাভ আমাজনের মাধ্যমে আসে।’
কলম্বিয়া সীমান্তঘেঁষা পেরুর পেরেইরার কাছাকাছি থাকা একজন আদিবাসী নেতা বলেন, ‘যদি ব্রাজিলের সরকার জরুরি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সম্পূর্ণ অঞ্চল মাদক পাচারকারীদের দ্বারা পরিচালিত হবে।’ এ ব্যাপারে লিমাও সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব হারাব’। অন্তত চারটি ব্রাজিলীয় ড্রাগ গ্রুপ-সিভি, পিসিসি, ওএস ক্রিয়াস ও ফ্যামিলিয়া ডো নর্তে এই অঞ্চলে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে কলম্বিয়া ও পেরুর কিছু দলও যুক্ত আছে বলে জানা যায়। এটি নিয়ন্ত্রণে না আনলে এই অঞ্চলটি ইউরোপ ও ব্রাজিলের মাদক পাচারে প্রধান পথ হিসাবে গণ্য হবে বলে জানা যায়। এর ফলে আমাজন প্রচণ্ড বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।