পেটের কোনদিকের ব্যথা, কী রোগের লক্ষণ?

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

সুবর্ণবাঙলা ওয়েবডেস্ক

পেটের বিভিন্ন অংশের ব্যথা বিভিন্ন রোগের জানান দিতে পারে। বদলে যেতে পারে চিকিৎসা পদ্ধতি। পেটের নানাবিধ ব্যথা সম্পর্কে পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল।

শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ ‘ঝামেলা’-র সূত্রপাত হয় পেট থেকে। ইদানীং রোগের এত বিচিত্র প্রকার আমরা দেখি যে, সামান্য উপসর্গ থেকেও বড় অসুখ ধরা পড়ে। তাই অল্প সমস্যাতেও আমরা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিই। তবে এও ঠিক, ছোট ছোট অসুখগুলো কিন্তু পৃথিবীর বুক থেকে নির্মূল হয়ে যায়নি। তাই অল্প সমস্যাতেই দুশ্চিন্তা করবেন না। সবসময় যে বড় অসুখ করবেই, এমন ভাবনা নিরর্থক। তবে ঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসকের কাছে গেলে অসুখকে প্রথমেই আটকে দেওয়া যায়।

পেটে ব্যথার রকমফের

এপিগ্যাসট্রিয়ামে ব্যথা: পেটে যেসব ব্যথা মূলত ভোগায়, তার অন্যতম পেটের মাঝখানে এপিগ্যাসট্রিয়ামে ব্যথা। এই ব্যথা পেটের উপরে মাঝখান দিয়ে শুরু হয়। পেটে কখনও চিনচিনে, কখনও জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা হয়। এর সঙ্গেই থাকে টক ঢেঁকুর, বমিভাব। অনেক সময়ে খুব ঘাম হতে পারে। আলসার বা গ্যাসট্রিকের সমস্যা থেকে এই ব্যথা হয়। খাবার খাওয়ার পর এই ব্যথা কমলে বুঝতে হবে তা ডিওডেনাল আলসারের ব্যথা। খাবার খাওয়ার পর ব্যথা বাড়লে বুঝতে হবে তা গ্যাসট্রিকের ব্যথা।

গলব্লাডারে পাথর: তেল-মশলার খাবার খেলেই পেট যেন কামড়ে ধরে। কিছুক্ষণ বাদে ছেড়ে যায়। এই ব্যথায় পেটের উপরের অংশে ডান দিকে কনকনে ব্যথা থাকে। মাঝে মাঝে ব্যথা ডান কাঁধে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, বমিভাব থাকে।

প্যাংক্রিয়াটাইটিসের ব্যথা: এই ব্যথা খুব তীব্র। উঠে দাঁড়ালে বাড়ে। বসে পড়লে কমে যায়। এর মধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় পিত্তনালীর পাথর ও অতিরিক্ত মদ্যপানকে। সাধারণত পিত্তনালীর পাথরের কারণে মহিলাদের মধ্যে অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে মদ্যপানের কারণেই এই অসুখের হানা দেখা যায়। এছাড়াও দেহে লিপিড বা ক্যালশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়। পেটের উপরিভাগ থেকে শুরু হয়ে এই যন্ত্রণা ক্রমশ গোটা পেট-সহ পিঠের শিরদাঁড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে আবার তীব্র ব্যথার সঙ্গে বমিও হয়ে থাকে।

কিডনিতে স্টোন: এই ব্যথা পেটের উপরের অংশে শুরু হয় ও ক্রমে তলপেটের দিকে নামে। এই ব্যথা খুবই তীব্র হয় আর মাঝে মাঝে ব্যথা ছাড়ে। আবার শুরু হয়। তার সঙ্গে বমি ভাব আর জ্বর আসতে পারে।

কোলাইটিস: কোলন বা বৃহদন্ত্রের ভিতরে কোনও সমস্যা হলে, যেমন প্রদাহ হলে, জ্বালা করলে বা ফুলে গেলে কোলাইটিস হয়। যাঁরা বহু দিন ধরে শারীরিক কোনও কারণে স্টেরয়েড খাচ্ছেন, তাঁদেরও অনেক সময় ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে কোলাইটিসে ভুগতে হয়। টিউবারকুলোসিসের জন্যও কোলাইটিস হয়। এ ক্ষেত্রে টিবি কোলনে বাসা বাধে। কোলাইটিসের ব্যথা বেশ তীব্র। পেটের নীচের দিকে ছড়ায়।

অ্যাপেনডিসাইটিস: এই রোগে ব্যথার সূত্রপাত পেটের ডান দিক না-ও হতে পারে। তবে এই ব্যথা শুরু হয় সাধারণত নাভির চার পাশে। ক্রমশ সেই ব্যথা ছড়াতে থাকে ডান দিকে। এর সঙ্গে জ্বর, বমি বা পেট খারাপও হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে কুঁচকির উপরের অংশে ব্যথা। ব্যথার জায়গায় আঙুল ঠেকালেই এই ব্যথা তীব্রতর হয়।

বুক ও পেটের এই ব্যথাবেদনার উপর নির্ভর করে ও অন্যান্য উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা করেন। তাই অসুখ করলে ওষুধের দোকান থেকে প্রচলিত ওষুধ না কিনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *