প্রবাস প্রগতি সুরক্ষা সমতার দ্বার খুলছে

অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয়

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা আর সমতা। সর্বজনীন পেনশনের চার কর্মসূচি। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ এই কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। সরকারের সর্বজনীন কর্মসূচিতে ১৮ বছর বয়সে যুক্ত হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা মিলবে। যুক্ত হতে বয়স যত বাড়বে, আনুপাতিক হারে কমতে থাকবে সুবিধাও। এভাবে যে কেউ তাঁর মোট চাঁদার (কিস্তি) চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ টাকা পেনশন পাবেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

এ পটভূমিতে বহু প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির দুয়ার খুলছে আজ বৃহস্পতিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় গণভবনে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের গত রোববার জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তাঁর নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।

বেসরকারি কর্মচারীরা মাসিক দুই, তিন ও পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রগতি স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীর ৫০ শতাংশ চাঁদা চাকরিজীবী নিজে ও মালিকপক্ষ ৫০ শতাংশ হারে বহন করবে। তবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মসূচিতে অংশ নিতে না চাইলে যে কেউ নিজ উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। একইভাবে প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিমে মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা।

অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ স্কিম থাকছে। কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এক, দুই, তিন এবং পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। এ ছাড়া অতি দরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’ স্কিমে চাঁদার পরিমাণ মাসে এক হাজার টাকা। এর মধ্যে গ্রাহক প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেবেন। বাকি ৫০০ টাকা সরকার পরিশোধ করবে। যাঁদের বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকার কম, তারাই এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা বিধিমালা

গ্রাহকদের পেনশন সুবিধা দিতে সরকারের বাড়তি কোনো টাকার প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, গ্রাহকদের চাঁদার ওপর বার্ষিক ৮ শতাংশ হারে সুদ ধরেই এ অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব। আর সরকার পেনশন তহবিলের এ অর্থ দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক এবং নিরাপদ বিভিন্ন উদ্যোগে বিনিয়োগ করবে। এ জন্য সর্বজনীন পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা একটি বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগির তা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে।

খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, জনগণের আমানত সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তাই নিরাপদ ও দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা পাওয়া যায় এমন সব ক্ষেত্রে এ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে তহবিলের একটি অংশ ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত প্রথম সারির ১০ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি এফডিআর আকারে রাখা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক সক্ষমতা বা ঋণ দেওয়া হলে সেটা ঠিক সময়ে পরিশোধ করার ক্ষমতা কতটা আছে, সেটাই ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া তহবিলের একটি অংশ সরকারে অবকাঠামোগত লাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। যাতে জনগণের আমানত সুরক্ষার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা আসে। এ ছাড়াও একটি অংশ ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে।

ব্যাংকের আমানতে পড়বে না প্রভাব

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি শুরু হলে ছোট ছোট বিনিয়োগকারী এতে অংশ নেওয়ায় ব্যাংকিং খাতে আমানত কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে ব্যাংকাররা মনে করছেন, এর ফলে ব্যাংক খাতের আমানতে প্রভাব পড়বে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক খাত উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন সমকালকে বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। তাই পেনশন কর্মসূচি শুরু হলে ব্যাংকের আমানতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মোট অর্থের প্রায় ১৫ শতাংশ নগদ লেনদেন হয়। পেনশন কর্মসূচি শুরু হলে নগদ অর্থের কিছু অংশে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন হবে, এতে করে বরং ব্যাংক খাত উপকৃত হবে। এ ছাড়া পেনশন তহবিলের একটি অংশ ব্যাংকে রাখা হলেও ব্যাংক খাত লাভবান হবে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এখনও পূর্ণাঙ্গ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় আপাতত অর্থ বিভাগের আওতাধীন সংস্থা হবে এটি। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে গত জুলাইয়ে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খান। আরেক অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা নিয়োগ পেয়েছেন সদস্য হিসেবে।

উদ্বোধনী আয়োজন

কয়েকজন গ্রাহকের নিবন্ধনের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পরই ওয়েবসাইট (িি.িঁঢ়বহংরড়হ.মড়া.নফ) ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পেনশন কর্মসূচির নিবন্ধন করা যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালিভাবে যুক্ত থাকবে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, রংপুর জেলা প্রশাসন এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *