শেখ হাসিনার জন্ম গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পুনর্জন্ম

জাতীয়

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। এ দিনটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার জন্ম না হলে বাংলাদেশে রাজনীতি, গণতন্ত্র, অর্থনীতি তথা উন্নয়নের পুর্নজন্ম ঘটতো না। শেখ হাসিনারও পুর্নজন্ম ঘটেছে এ দেশে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বাবা-মা-তিনভাইসহ নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে হয়তো তাঁকেও হত্যা করা হতো কিন্তু জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

জাতীয় জাগরণ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বাংলাদেশের পুনর্জন্মের জন্য ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিন এটি। কেননা ছয় বছর বিদেশে অবস্থান করে এইদিন সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর রক্তক্ষরণের দুঃসহ যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন না করলে দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ইতিহাস অন্যভাবে প্রবাহিত হতো। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে। বাংলাদেশ হয়েছে আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত গণতন্ত্র, আবার উন্নয়ন গণতন্ত্রেরও অন্যতম প্রভাবক। এ নিয়ে জ্ঞানবিশ্বে বিতর্ক শুরু হয় ১৭ শতকের দিকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়। শুধু উন্নয়নের মাধ্যমে গণতন্ত্র অর্জন করা যায় না, অথবা শুধু গণতন্ত্র উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট নয়। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন আন্তঃসম্পর্কিত বিষয়টি বেশিরভাগ গবেষণায় প্রমাণিত। শেখ হাসিনা স্বদেশে ফিরে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক শাসন পরিচালনা করে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের পর সামরিক, আধা-সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা দীর্ঘ সময় বলবৎ থাকায় গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই নয়, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটাকেও হত্যা করা হয়েছিল। একের পর এক ১৯টি সামরিক ক্যু হতে থাকে, চলতে থাকে সামরিক শাসন, স্বৈরশাসন। গণতন্ত্রের পরিবর্তে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ, আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দেওয়া হয় এবং সেনা ছাউনিতে বন্দি থেকেছে ভোট ও ভাতের অধিকার। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলে দেশ।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হন শেখ হাসিনা। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন, বারবার কারান্তরীণ হন। তার ওপর কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। স্বৈরাচার এরশাদ পতন আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন শেখ হাসিনা। প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন। মাগুরা-২ উপনির্বানে ব্যাপক কারচুপি হলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি সরকারের অধীনে সকল নির্বাচন বর্জন করেন। তীব্র আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া সরকারেরও পতন হয়।

শেখ হাসিনা আবারও প্রমাণ করেন জনগণই রাজনীতির মূল শক্তি ও সংসদীয় গণতন্ত্রই বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার প্রাণ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ জুন ১৯৯৬। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গঠন করে সরকার। আবার ১ অক্টোবর ২০০১ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। কিন্তু আবারো শেখ হাসিনাকে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইস্যুতে। দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে। ইয়াজউদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দেন। ফখরুদ্দীন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ১২ জানুয়ারি ২০০৭। ‘মাইনাস-টু-ফর্মুলা’ গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

শেখ হাসিনা ১৬ জুলাই ২০০৭ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হন এবং ১১ জুন ২০০৮ মুক্তিলাভ করেন। মুক্তি ও শক্তি পায় দেশের গণতন্ত্র। শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর আগে শেখ হাসিনা চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের জাগরণে সংগ্রাম করেছেন, কখনও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, কখনও সরকার কাঠামোয় নেতৃত্ব দিয়ে। তিনি একদিকে গণতন্ত্রকে সমুন্নত করেছেন, অন্যদিকে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে।

শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মেগাপ্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সরকারের অদম্য সাহস বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থাকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশ এশিয়ার বাঘ হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সূচকের সরকারের সাফল্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমজিডি) নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্জিত হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সরকার কঠোর পরিশ্রম করছে এবং লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথে অগ্রগামী হচ্ছে। এইচবিএসসি’র প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।

শেখ হাসিনা স্বনির্ভর অর্থনীতি ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুনিপুন কারিগর। পদ্মা সেতুর মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তব রূপদান তারই প্রমাণ। তার সাহসিকতাই এখন সক্ষমতার বাংলাদেশ। তার উন্নয়ন দর্শন বিশ্বে রোল মডেল। করোনা মোকাবেলায়ও মডেল দেশ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীন উন্নয়নের জনক। কেননা, উন্নয়নে স্বনির্ভরতা ও স্বাধীনতার স্বাদ তিনিই প্রথম বাংলাদেশকে দিয়েছেন পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে। তার প্রতি জনগণের আন্থা ও নির্ভরতা যেমন বেশি, জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতাও বেশি। দীর্ঘসময় আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন আবার দারিদ্রমুক্ত করে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ তৈরি করেছেন তার নিজস্ব উন্নয়ন দর্শন (রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১) দিয়ে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের দেয়াল তৈরি করেছেন তিনি। দেশি-বিদেশি অগণতান্ত্রিক শক্তি বা চক্রান্ত দিয়ে বাংলাদেশের এ দেয়াল আর ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব ও তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাকরণ অপরিহার্য।

(লেখা: মোহা. মাহামুদুল হক, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়/ সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রিয় কমিটি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *