শেখ হাসিনাকে খুব সহজ মানুষ মনে হয়েছে: শর্মিলা ঠাকুর

বিনোদন

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা ক্লাবে শুক্রবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রেস মিটে জীবনের নানা বিষয়ে কথা বলেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর

ঊনআশিতেও তিনি অনন্যা। শরীরে কিংবা মুখচ্ছবিতে বয়সের ছাপ পড়লেও হারায়নি স্নিগ্ধতা। চলনে-বলনে এখনো ধরে রেখেছেন রূপালী পর্দার সেই জৌলুস। পোশাক থেকে বাচনভঙ্গিতেও সময়কে জয় করে তিনি সমকালীন কিংবা আধুনিক। কালো কুর্তির ওপর চেক রঙের মাফলার চাপিয়ে আবৃত করেছিলেন নিজেকে। সেই পোশাকের সঙ্গে পায়ে ছিল মানানসই কালো রঙের বুট। এভাবেই স্বকীয়তায় অনুষ্ঠানে দ্যুতি ছড়ালেন উপমহাদেশের বরেণ্য অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। গত শতকের সত্তরের দশকের ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের এই আলোচিত নায়িকা শুক্রবার হাজির হয়েছিলেন ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রেস মিটে। ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। গণমাধ্যমের ছুঁড়ে দেয়া প্রশ্নের জবাবের পাশাপাশি নিজে থেকেও বলেছেন চলচ্চিত্রসহ জীবনের নানা বিষয়ে। সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুভূতি, উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয়ের সুখস্মৃতি, ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের সিনেমা দেখাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। প্রেস মিট উইথ শর্মিলা ঠাকুর শীর্ষক প্রাণবন্ত অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন খ্যাতিমান অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুভূতির বিষয়ে শর্মিলা বলেন, অনেক ব্যস্ততার মাঝে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিংয়ের ফাঁকে তিনি সময় দিয়েছেন। মন খুলে আলাপ করেছেন। উৎসহ নিয়ে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। পরদিন আবার সেই ছবি আমাকে পাঠিয়েও দিয়েছেন। এমনকি এর আগে আমি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতে এখানে এসেছিলামÑসে কথাও আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাকে খুব সহজ মানুষ মনে হয়েছে। অমায়িক আচার-ব্যবহারের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে তাকে সাধারণ মানুষ মনে হয়েছে। এ কারণে আমার কাছে তাকে আপনজন মনে হয়েছে। সুন্দর সময় কেটেছে তার সঙ্গে। নানা কথার মাঝে এই চলচ্চিত্র উৎসব নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্তি প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, মাত্র ১৩ বছর বয়সে মানিক দা (সত্যজিৎ রায়) আমাকে অপুর সংসার ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে সময় ছবিতে আমার অভিনয়ের ব্যাপারে পরিবার আগ্রহী ছিল না। শেষ পর্যন্ত মানিক দাই ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে আমার পরিবারকে রাজি করিয়েছিলেন। তিনি যদি সেটা না করতেন তাহলে আমার চলচ্চিত্রে আসা হতো না। তখন হয়তো আমি শান্তি নিকেতনে পড়তাম এবং তারপর অন্য কোনো পেশায় জড়িয়ে যেতাম। আর প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই প্রশংসিত হওয়ায় পরবর্তীতে আমাকে আমাকে স্ট্রাগল করতে হয়নি। এটা আমার অভিনয়জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করেছে।

উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার চলচ্চিত্রের সূত্র ধরে আমার ও সৌমিত্রের ক্যারিয়ার শুরু হয়। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। সম্পর্কটা ছিল খুব সহজ-সরল। এ কারণে এখনো তাকে মিস করি। অন্যদিকে উত্তম কুমারের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল ফরমাল। শুরু থেকেই তাকে শ্রদ্ধা করতাম। এখনো করি। কারণ বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে এখনো কেউ ছুঁতে পারেনি।

বাংলাদেশের সিনেমা প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে ১৫টি চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে জয়া আহসান অভিনীত ফেরেশতে নামের ছবিটি দেখে ভালো লেগেছে। ওই ছবিতে জয়া আহসানের অভিনয় ভালো লেগেছে। তার অভিনয়দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

ঢাকা সফরের অনুভূতি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শর্মিলা বলেন, এখানে আমাকে দারুণভাবে আপ্যায়ন করা হয়েছে। প্রচুর মজাদার খাবার খেয়েছি। যখন যা চেয়েছি সেটাই হাজির করা হয়েছি। ফলে নিজেকে ভিআইপি মনে হয়েছে। অন্যদিকে আবার এই শহরে অনেক বেশি গাড়ির চাপে ট্রাফিক জ্যামে পড়তে হয়েছে। তাই অনেকে জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। তবে কবিতার প্রতি অনুরাগ থাকায় সময় করে কিছু কাব্যগ্রন্থ সংগ্রহ করেছি। একটি কাব্য সংকলন উপহারও পেয়েছি।

জীবনসঙ্গী মনসুর আলী খান পতৌদির বিষয়ে শর্মিলা বলেন, নবাবের না থাকার শূন্যতা আমি কখনো অনুভ করি না। কারণ, আমি মনে করি না যে সে নেই। শরীরীভাবে না থাকলেও মানসিকভাবে সে মিশে আছে আমার সঙ্গে। তার সঙ্গে আমার পরিচয়-প্রণয়সহ আমাদের পরিবারের নানা বিষয় নিয়ে একটি বায়োগ্রাফি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *