পাচারকারীর কবলে টিকটকের দুই বান্ধবী

অন্যান্য আইন আদালত

অনলাইন ডেস্ক

.রাজধানীর হাজারীবাগে টিকটকের দুই বান্ধবী পাচারকারীর কবলে পড়েছে। তাদের ভারতে পাচার করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে ধারণা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ইতোমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক টিম তাদের উদ্ধারে মাঠে নেমেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে দুই বান্ধবীর শেষ লোকেশন ছিল যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকা। সেখানে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি রাত একটার দিকে নিখোঁজ হওয়া দুই বান্ধবীর একজনের নম্বর থেকে তাদের পরিবারের কাছে ভিডিও কল দিয়ে পাচার হওয়ার কথা জানায় অজ্ঞাতনামা একব্যক্তি। তখন এক মেয়ে তার ভাইকে জানায়, ভাইয়া আমাদের বাঁচাও। আমরা বিপদে আছি। এরপর থেকে তাদের মোবাইল নম্বর, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জার বন্ধ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো একটি চক্র কৌশলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দুই বান্ধবীকে তুলে নিয়ে দেশের বাইরে পাচারের বা কোথাও আটকে রেখে অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এর আগে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে পৃথকভাবে তিন কিশোরী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। এর কয়েকদিন পরই দুই বান্ধবী নিখোঁজ হওয়ায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নড়েচড়ে বসে। এরপরই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, সাইবার ইউনিটসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত শুরু করে। নিখোঁজদের উদ্ধার ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে তারা।

সূত্রগুলো জানায়, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেল থেকে হাজারীবাগের বোরহানপুর এলাকার জনৈক মাসুদের বাড়ির ভাড়াটিয়া নিলু আক্তার ও ইদ্রিস দম্পতির মেয়ে সুমনা আক্তার (১৫) ও তার বান্ধবী খাদিজা আক্তার (১৪)। ওইদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও বাসায় ফিরে না আসায় আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেয় স্বজনরা।

নিখোঁজ সুমনার মা নিলু আক্তার জনকণ্ঠকে জানান, ১০ বছর ধরে হাজারীবাগের বোরহানপুর এলাকার বিভিন্ন বাসায় ভাড়ায় বসবাস করছিলাম। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কালুনগর এলাকায় জনৈক কবিরের বাড়িতে তারা ভাড়া নেন। তিনি জানান, দুই বছর আগে মেয়ে সুমনাকে গাড়িচালক শাওনের সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর থেকে তারা হাজারীবাগে ঝাউচর মাহাজিনগর থাকত। নয় মাস বয়সী আবির নামে সুমনার এক ছেলে রয়েছে। নিলু আক্তার জানান, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে আমার মেয়ে সুমনা তার বান্ধবী খাদিজাকে নিয়ে বাসার সামনে ঘুরতে বের হয়। এরপর তারা আর বাসায় ফিরে আসেনি।

পরদিন ২৪ জানুয়ারি রাত একটার দিকে সুমনার ইমু নম্বর থেকে একটি কল আসে আমার ছেলে রাজুর মোবাইলে। সেখানে অজ্ঞাতনামা একজন লোক বলছিল আপনাদের মেয়ে ভারতে পুলিশের কাস্টডিতে আছে। আপনারা যথাযথ মাধ্যমে চেষ্টা করেন। ওই সময় সুমনাকেও ভিডিও কলে কথা বলতে দেন অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি। তখন সুমনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ভাই আমারে তোরা বাঁচা। আমি ও খাদিজা খুব বিপদে আছি। এরপরই অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি মোবাইল কেটে দেন। এরপর থেকে সুমনার সেলফোনটি আর চালু হয়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। এমন খবর শুনে আমরা হাজারীবাগ থানায় গিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই। পুলিশ আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিখোঁজদের ছবি এবং আইডি কার্ড নিয়েছে। পরে কোনো খোঁজ না পেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি নিলু আক্তার হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডি নম্বর-১৫৫৭। বারবার পুলিশের কাছে গিয়েছি। তাদের কাছ থেকেও এখন পর্যন্ত আশ^াসই পেয়েছি, কিন্তু মেয়েকে পাইনি। এ সময় তার পাশে ছিলেন সুমনার বাবা দিনমজুর মো. ইদ্রিস। তিনি বলেন, মেয়ে নিখোঁজের পর থেকেই কোনো খাবার মুখে নেননি তার স্ত্রী। সারক্ষণই নাতি আবিরকে জড়িয়ে ধরে সুমনাকে ফিরে পেতে কাঁদছেন।

এদিকে নিখোঁজ খাদিজা আক্তারের মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমিও বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালাই। আমি জীবিকার তাগিদে হাজারীবাগের বোরহানপুর থাকি। দুই বছর আগে মেয়ে খাদিজাকে সবুজের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেই। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মেঘনা এলাকায় খাদিজা তার স্বামী সবুজকে নিয়ে বসবাস করত। সেখানে আমার স্বামী আহম্মেদ হোসেন মাছের ব্যবসা করেন। নিখোঁজের ২০ দিন আগে আমাকে দেখতে খাদিজা ঢাকায় আসে।

প্রতিবেশী ও স্বজনদের ধারণা, নিখোঁজ দুই কিশোরী পাচারকারীর কবলে পড়েছে। তারা বলছেন, কোনো একটি চক্র কৌশলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তুলে নিয়ে দেশের বাইরে পাচারের বা কোথাও আটকে রেখে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রদীপ চন্দ্র জানান, একত্রে দুই বান্ধবীর নিখোঁজের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে। মোবাইল ট্রেকিং করে তাদের শেষ অবস্থান জানা গেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যশোর এলাকায়। তাদের উদ্ধারে র‌্যাব, ডিবি, পুলিশ ও বিজিবি একাধিক টিম কাজ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার সাইবার ইউনিট তদন্ত করছে। আশা করছি শীঘ্রই দুই কিশোরীকে উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *