সরকারের ব্যর্থতায় মাবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে

আইন আদালত জাতীয়

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী-এমপি ও নেতাকর্মী গত কয়েক দিনে গ্রেফতার হয়েছেন। আইনি ও বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হচ্ছে; কিন্তু পুলিশের নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আদালতে নেয়ার কিংবা বার করার সময় আদালত প্রাঙ্গণেই তাদের শারীরিক হামলা ও হেনস্তার ঘটনা ঘটছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন উঠছে। এ প্রবণতাকে ইতিমধ্যে ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন আইন বিশেষজ্ঞগণ। পুলিশের শীর্ষ পর্যায় হতে অবশ্য বলা হয়েছে অস্বাভাবিক এ সময়ে অনেক কিছুই ঘটছে। যদিও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের রাগ-ক্ষোভ-ক্রোধ মিটে গেলে পরিস্থিতি এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

তবে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করার সময় যে ধরনের ‘ক্রাউড’ বা ভিড়’ লক্ষ করা যায়, তা স্বভাবতই চিন্তার উদ্রেক হেয়। এ অবস্থায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অনেকের ক্ষোভ থাকতে পারে, নানাবিধ অভিযোগ- অনুযোগ থাকতে পারে। সে সব বিষয়ের সুরাহার জন্যই তাদের আদালত তথা বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। সুতরাং, সংক্ষুব্ধ হয়ে তাহাদের উপর মারমুখী হওয়া কিংবা কোনোরূপ আচরণগত প্রবণতার বশবর্তী হওয়াটা নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। বরং এ ক্ষেত্রে সব্ইাকে শৃঙ্খলা বজায় রাখাতে সচেষ্ট হতে হবে।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গ্রেফতারকৃতদের প্রায় সবাই রাজনীতিবিদ। ক্ষমতার পালাবদলে নানা অভিযোগের খড়গ মাথায় নিয়ে তারা বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। এ সব ঘটনার উপর দেশ ও বিদেশের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে, তারা গভীরভাবে নজর রাখছে। ফলে এ রকম অবস্থায় আদালতের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে কোনোরূপ অন্যায়, অন্যায্য এবং আইনবহির্ভূত আচরণ করা দেশ ও সরকাররের সঠিক ভাবমূর্তির পরিপন্থি হিসাবে গণ্য হইতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সকল কর্মকাণ্ড দেশের মানুষ কীভাবে গ্রহণ করছে, তার চেয়ে বরং দৃষ্টি দিতে হবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গন্ েএর কী প্রভাব পড়তে পারে, কী ধরনের মেসেজ যেতে পারে তার উপর।

ইতিমধ্যে এ ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ হিসাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণে মব জাস্টিস কেন? নিরাপত্তা দিতে না পারলে অন্য ব্যবস্থায় তাদেরকে আদালতে হাজির করা উচিত। দেশ-বিদেশে প্রথিতযশা কেউ কেউ এ ঘটনায় মন্তব্য করেছেন যে আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালতে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলি উদ্বেগজনক। যে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি যেমন অধিকার, তেমনি তার নিরাপত্তা বিধান ও সরকারের দায়িত্ব। তবে আশার কথা হল, সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। খোদ অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের কথায় তা স্পষ্ট। তিনি বলেছেন আদালত চত্বরে যে হামলা হচ্ছে, তা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আদালতে নেয়ার সময় আক্রমণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

দার্শনিক উইলিয়াম গডউইন বলেছেন, ‘আইনি বিচার হল সকল নৈতিক কর্তব্যের সমষ্টি।’ বলা হয়ে থাকে, ‘আইনের নিয়মে পাওয়া ন্যায়বিচারই সভ্য সমাজের স্থায়ী নীতি।’ বস্তুত, প্রতিটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রেরই নিজস্ব আইন রয়েছে এবং সে অনুযায়ী যাবতীয় বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়। আর্ এর ব্যত্যয় ঘটলে বিচারকার্য বিঘ্নিত হয়, সৃষ্টি হয় অপ্রত্যাশিত বিশৃঙ্খলা। আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া গণতন্ত্রের জন্যও অত্যাবশ্যকীয়: যেমনটি বলেছেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী-‘আইনের শাসনকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে, যাতে আমাদের গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো অটুট ও শক্তিশালী থাকে।’ মূলত এ সকল কথার সারবস্তু হিসেবে সব সমাজে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সুতরাং, আদালতে এবং আদালত অঙ্গনে দলমত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে গ্রেফতারকৃত সকলের সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয় যতœবান ও সতর্ক থাকতে হইবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *