সুবর্ণবাঙলা প্রতিনিধি
গাজীপুরের টঙ্গীতে সশস্ত্র চোর ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, প্রাত:ভ্রমণকারী, পোশাক শ্রমিকসহ সাধারণ পথচারীরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
এতে অতিষ্ঠ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর চোর-ছিনতাইকারী আটক করতে নগদ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। প্রতিটি চোর ও ছিনতাইকারী ধরে দিতে পারলেই ১০ হাজার টাকা করে নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে।
এছাড়া এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা টঙ্গী সমাজকল্যাণ ও নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন জোনের নিরাপত্তাকর্মীরা ইতোমধ্যে কয়েকজন সশস্ত্র ছিনতাইকারী ও চোরকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার গাজীপুরা, সাতাইশ, ধরপাড়া, রাজনগর, গুটিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোড, হযরত শাহজালাল (র.) রোড, খাঁপাড়া রোডের মাথা থেকে তিলারগাতি, বড় দেওড়া আক্কেল আলীর বাথান, মিত্তিবাড়ি বটতলা থেকে শ্মশান রোড, মোল্লাবাড়ি রোড, নান্দু মোড়ল রোড, হোসেন মার্কেট থেকে মোক্তারবাড়ি চৌরাস্তা, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি রোড, কলেজ রোডের মাথা থেকে আলকাছ কমিশনারের রাস্তা হয়ে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কেয়া শারমিনের বাড়ির রোড, সুরতরঙ্গ রোড, চেরাগআলী থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস রোড হয়ে বড় দেওড়া ফকির মার্কেট, মুদাফা মাদ্রাসা মার্কেট এবং আন্দারুল, কাঠালদিয়া, কলাবাগান বস্তি, নিশাতবস্তি, লাল মসজিদ বস্তি, মিলগেইট থেকে অলিম্পিয়া উচ্চবিদ্যালয়, টঙ্গী স্টেশন রোড হতে কামারপাড়া ব্রিজ, সেনাকল্যাণ কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স রোড হতে হোন্ডা কারখানা, হাজীর মাজারবস্তি এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা দল বেঁধে ভোররাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চুরি-ছিনতাই করে থাকে।
এসব রাস্তায় চলাচলরত বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ পথচারী ও প্রাত:ভ্রমণকারীদের ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীদের কবল থেকে জানমাল নিরাপদ রাখতে এবং এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন মোল্লা প্রতিজন চোর ও ছিনতাইকারী আটক করার জন্য ১০ হাজার টাকা করে নগদ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ভোররাতে কলেজরোড কাঁচাবাজার এলাকা থেকে মিরাজ (৩৬) নামে এক তালা-গ্রিল কাটা চোরকে আটক করে এবং শনিবার ভোররাতে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি রোডে ছিনতাইকালে ইউনুছ মিয়া (২২) নামে এক ছিনতাইকারীকে ধারালো চাপাতিসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
বড় দেওড়া মাইনুদ্দিন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা ডায়াবেটিস রোগী রিনা আক্তার (৪৮) জানান, শুক্রবার সকালে হাঁটাহাঁটি করার সময় কলেজ রোডের আলকাছ কমিশনারের বাড়ির সামনে পৌঁছলে ৪-৫ জন ছিনতাইকারী ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।
এদিকে কলেজ রোডের এইচএম ফার্নিচার দোকানের সামনে থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা কয়েকজন পথচারীর মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ৫৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী বিল্লাল হোসেন মোল্লা জানান, ইদানীং এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। তাই আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষার্থে পুরো ওয়ার্ডকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে এলাকাবাসীর উদ্যোগে সমাজকল্যাণ ও নিরাপত্তা পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। এ সংগঠনের অধীনে প্রায় ৪০-৪৫ জন নিরাপত্তাকর্মী সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিজন চোর-ছিনতাইকারী আটক করার জন্য ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একজন ছিনতাইকারী ও একজন চোরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় ৫৪নং ওয়ার্ডকে একটি নিরাপদ ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, টঙ্গীবাজার থেকে গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতে মহাসড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। তবে আশুলিয়া, উত্তরা, এরশাদনগর, দত্তপাড়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে ছিনতাইকারীরা এসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এসব চোর-ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।