‘আমি তো নিজেকে তারকা-ই মনে করি না’

বিনোদন

তানভীর তারেক

কণ্ঠশিল্পী খালিদ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায়। বিরহী প্রেমের গানের ক্ষেত্রে যেন তিনি রাজা ছিলেন। অগণিত গান সাথে অগণিত ভক্ত রেখে গেলেন। মৃত্যুর আগে ক’টি বছর তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে।

প্রবাস জীবনে। কেমন ছিলেন তিনি নিউ ইয়র্কে? সে কথাই বলেছিলেন এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে। সেটিই ছিল শিল্পীর সবচেয়ে দীর্ঘ সাক্ষাত্কার। লিখেছেন তানভীর তারেক।

খালিদ ভাই, দেশকে কতটুকু মিস করেন?

ভীষণ! আসলে দেশটা যে কী জিনিস তা নিজের দেশে থাকলে বোঝা যায় না। বাইরে এলে বুঝি। আবার ধরো, শো করতে গেলে বা পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরতে গেলেও কিন্তু দেশ কী জিনিস বুঝবা না। যখন দেশের বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নেবে, তখন বুঝবে দেশ কী জিনিস। এখন বুঝি আমার দেশের প্রতি কী মায়া।

তাহলে দেশ ছাড়লেন কেন?

এর উত্তর কীভাবে দেবো। বলতে পারো কৌতূহল। পরিবারের চাওয়া। আচ্ছা দেখি গ্রিন কার্ড, বিদেশি পাসপোর্টে কী সুবিধা—এসব নানান কারণে আমার আসা। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার এখানে থাকতে ভালো লাগে না। এখানে কিছু কাগজপত্র বাকি আছে। সেগুলো হাতে পেলেই আমি দৌড় দেবো।

দেশে ফিরে নতুন গান করবেন নিশ্চয়ই?

হ্যাঁ। তা তো অবশ্যই। শান্টু আমার জন্য ১২টা গান করে রেখেছে। সেগুলো গাইবো। স্টেজে গাইবো।

আপনি ছাত্র আন্দোলন থেকে রক কনসার্টের মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ঢাকার কোন বিষয়টি মিস করেন?

সব, সবকিছু মিস করি। ঐটা তো আমার নিশ্বাসের জায়গা।

অগণিত গান আপনার জনপ্রিয় হয়েছে। নিজের ব্যান্ড গড়েছেন আবার ভেঙেছেন। আপনার চাইমের ভাঙাগড়া হয়েছে। এগুলো কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

হয়েছে। কিন্তু এসব ভাঙাগড়ার জন্য আমি মোটেই দায়ী নই। আমি কোনো ঝুট-ঝামেলায় কোনোদিন ছিলাম না। আজো নেই। ব্যান্ডের ভাঙাগড়া নিয়ে তো আমাকে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। এগুলো জীবনের অংশ বলতে পারি। আর কী বলব।

এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারের পর আপনি অনেকদিন হলো আমেরিকায় অবস্থান করছেন। আপনি নতুন গানও গাইছেন না দীর্ঘদিন। এর ভেতরে কি কোনো প্রযোজক বা আপনাদের সংগঠনগুলো আপনার খোঁজ নিয়েছে যে, আপনি কেমন আছেন?

[মুচকি হেসে কিছুক্ষণ চুপ থেকে] হ্যাঁ, নিয়েছে। খোঁজ নিয়েছে। হয়তো আমি যেভাবে প্রত্যাশা করেছি, সেভাবে ওরা নেয়নি।

খালিদ ভাই, শেষ বয়সটা কীভাবে দেখতে চান?

বয়সের শেষ কখন অবশ্য কেউই আমরা জানি না। তবু—

আমি চাই আমি যেন আমার মৃত্যুর সময় কারো মুখাপেক্ষী না হই। কাউকে যেন বিরক্ত না করি।

এই যে গানের পুরস্কার নিয়ে এক পুরোনো নিয়ম। শুধুমাত্র চলচ্চিত্রে গান করলেই জাতীয় স্বীকৃতি মেলে। এর বাইরে পাওয়া যায় না। আপনার এসব নিয়ে আক্ষেপ জাগে না?

নাহ। কেন জাগবে। আমি কি তারকা হয়েছি? আমি তো নিজেকে তারকা-ই মনে করি না। দর্শকরা গ্রহণ করে আমাকে, তাই আমি গান করে চলতে পারি। এটুকুই। ওসব প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি গুনলে তো গান হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *