সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন
প্রতীকী ছবি
তিন মাস পর পর মিলবে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র। এজন্য প্রথমবারের মতো করা হচ্ছে কোয়ারলি জিডিপি (কিউজিডিপি) হিসাব। প্রতি তিন মাসে হিসাব প্রকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩৭টি দেশ এভাবে হিসাব প্রকাশ করে থাকে। আগামীতে এর সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশের নামও।
বুধবার এ বিষয়ে স্টেকহোল্ডাদের (অংশীজন) নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটরিয়ামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আহাম্মদ উল্যাহ এবং অর্থবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহেনা পারভীন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বক্তব্য দেন বিবিএসের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। এ সময় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উপ-পরিচালক ও কিউজিডিপি কার্যক্রমের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তি বছর ২০০৫-০৬ এবং ২০১৫ থেকে ১৬ তে পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ২০১৫-১৬কে ভিত্তি বছর ধরে বার্ষিক জিডিপি প্রাক্কলন ও প্রকাশ করা হচ্ছে। নতুন ভিত্তি বছরের জিডিপি প্রাক্কলনের জন্য বিবিএস দেশের অর্থনীতির ১৯টি খাতের মূল্য সংযোজন প্রাক্কলন করবে। সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে বিবিএস বার্ষিক জিডিপি প্রাক্কলনের পাশাপাশি ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রাক্কলনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে এরইমধ্যে বিবিএস আইএমএফের কারিগরি সহায়তায় আন্তর্জাতিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রাক্কলনের কাজ সম্পন্ন করেছে।
আরও জানানো হয়, ত্রৈমাসিক জিডিপি অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের একটি স্বল্পমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নির্দেশক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিবিএস ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রাক্কলনের জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর, সংস্থা থেকে সেকেন্ডারি ডাটা ব্যবহার করছে। ফলে ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রাক্কলনের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার যথেষ্ট সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিদ্যমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত প্রাক্কলিত ত্রৈমাসিক জিডিপি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ত্রৈমাসিক জিডিপি আগামী ডিসেম্বরে প্রকাশ করা হবে। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী, কোনো কোয়ার্টার অতিক্রম হওয়ার পরবর্তী ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রকাশের বাধ্যবাধকতা আছে। এ ছাড়া ত্রৈমাসিক জিডিপি একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হবে।
প্রধান অতিথির বত্তব্যে ড. শাহনাজ আারেফিন বলেন, দুই বছর আগে থেকেই বিবিএস তিন মাসের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হিসাবের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাক ক্যালকুলেশনসহ প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। এখন আইএমএফ এটি করতে বলছে। তাহলে এখানে বোঝার বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা চিন্তার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছি। তবে বিবিএস এককভাবে এ কাজ করতে পারবে না। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এই তথ্য সঠিক ও নির্ভুল হতে হবে। তথ্যের ক্ষেত্রে ভুল হলে চলবে না। আমরা এখন উন্নত দেশে যাচ্ছি। ফলে আমাদের সব কিছুই উন্নত হতে হবে। এটা সময়ের দাবি।
মো. মতিয়ার রহমান বলেন, তথ্য অন্যের কাছ থেকে নিয়ে আসাটা সহজ কাজ নয়। জিডিপি হচ্ছে উৎপাদন বেইজ, খরচ বেইজ নয়। উৎপাদনের তথ্য পাওয়া একটা কঠিন কাজ। কিন্তু এখন সেটি সহজে করা যাচ্ছে। এই কাজটি আমাদের বিশুদ্ধতার সঙ্গে করতে হবে।
আহাম্মদ উল্যাহ বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যেসব তথ্য দেবে সেগুলোতে ভেজাল থাকলে চলবে না। নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।