প্রচণ্ড গরমে সারা দেশে হিটস্ট্রোকে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়াগেছে

জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

সুবর্ণবাঙলা ডিজিটাল ডেস্ক

প্রচণ্ড গরমে পাবনার চাটমোহরে এক কৃষক, নরসিংদীর মাধবদীতে এক কাপড় ব্যবসায়ী, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক ভ্যানচালক ও মেহেরপুরের গাংনীতে এক গৃহবধূসহ চারজনের হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২১ এপ্রিল) পাবনা জেনারেল হাসপাতাল, নরসিংদী সদর হাসাপাতাল ও মেহেরপুরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে এ তিনজন মারা গেছেন। দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিতে রয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে বেশির ভাগ রোগীই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে।

শনিবার দুপুরে তীব্র দাবদাহের কারণে হিট স্ট্রোকে আমলগীর হোসেন আলম (২৮) নামে এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ বেপারীপাড়া গ্রামের শামসুল আলমের ছেলে।

পাবনা

পাবনায় নিহত আলাউদ্দিন (৪২) কৃষক উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের নেউতিগাছা গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে।

জানা গেছে, কৃষক আলাউদ্দিন বাড়ির পাশে ভুট্টা খেতে কাজ করার সময় প্রচণ্ড রোদ আর তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে স্বজনরা প্রথমে আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আয়শা সিদ্দিকা জানান, গরমের কারণে তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

নরসিংদী

এদিকে নিহত সাফকাত জামিল ইবান (৩০) মাধবদী থানার ভগীরথপুর গ্রামের মৃত জাকারিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় বাবুরহাটের কাপড় ব্যবসায়ী।

নিহত ইবানের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, স্ত্রী এবং তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তানকে নিয়ে নারয়াণগঞ্জে তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ঈদ পরবর্তী বেড়ানো শেষ করে নিজ বাড়ি মাধবদী ফিরছিলেন ইবান। এ সময় তীব্র তাপদাহের ফলে আক্রান্ত হন হিটস্ট্রোকে। পরবর্তীতে বাড়ি ফিরেও অজ্ঞান এবং অতিরিক্ত ঘামে স্বস্তিবোধ না করায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মাহমুদুল কবির বাশার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পরিবারের দেওয়া তথ্য মতে ধারণা করা হচ্ছে তিনি হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।

মেহেরপুর

মেহেরপুরের গাংনীতে হিটস্ট্রোকে শিল্পি খাতুন (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল ৮টায় উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের রুয়েরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

শিল্পি খাতুন রুয়েরকান্দি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী ও পার্শ্ববর্তী আমতৈল গ্রামের বিল্লাল হোসেন মালিথার মেয়ে।

শিল্পি খাতুনের ছেলে রওনক হোসেন জানান, আমার মা সকালে বাড়িতে কাজ করছিলেন। কাজ করতে করতে প্রচণ্ড গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান তিনি। আমার মায়ের কোনো অসুখ ছিল না।

স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইসমত আরা খাতুন বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রোগী মারা গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।

সিলেট

সিলেট নগরীতে সড়কে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়ে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত আবু হামিদ মিয়া (৩৪) হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর গ্রামের মো. করম আলীর ছেলে।

দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর দক্ষিণ সুরমার কাজিরবাজার ব্রিজের পাশে পুলিশ বক্সের সামনে এক অজ্ঞাত পরিচয়ের রিকশাচালক অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। লাশ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। হামিদের পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে শনিবার; সেদিন চুয়াডাঙ্গায় পারদ উঠেছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র গরমের কারণে শনিবার স্কুল-কলেজে সাতদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। পরদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অনলাইনে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁসের মধ্যে রোববার মেহেরপুর, সিলেট ও নরসিংদীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার মৃত্যু হয়েছিল অন্তত দুইজনের।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *