সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
.
বিভিন্ন কারণেই এবারের টি২০ বিশ্বকাপ ব্যতিক্রম। প্রথমত, এটিই হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ। ক্রিকেটে ছোট ফরম্যাটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে ২০টি দেশ। ওয়ানডে বিশ্বকাপ প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে, ইংল্যান্ডে। শুরুতে ৮, পরে ১০ দল নিয়ে হয় পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৬ দলের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ভারতে ১৩তম আসরটি ছিল ১০ দলের। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই এবার হতে যাচ্ছে ২০ দলের টি২০ বিশ্বকাপ। অবশ্য সহ-আয়োজক হিসেবে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ক্ষমতার আধার এ দেশটি আয়োজক হিসেবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নাম লিখিয়েছে।
১২ দল নিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত পঞ্চম আসরে সর্বোচ্চ ১৬টি দল অংশ নেয়। এরপর ২০২১Ñএ ওমান ও আমিরাতে সপ্তম এবং সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ায় (২০২২) অষ্টম বিশ্বকাপেও দল সংখ্যা সমান ছিল। বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে, খেলাটির বিশ্বায়নের জন্য ২০ দলের টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। জিম্বাবুইয়ের মতো দল বাদ পড়লেও বাছাই পেরিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে উগান্ডা ও কানাডার মতো দেশ।
অংশগ্রহণকারী ২০ দল চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। গ্রুপ ‘এ’ ভারত, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র। গ্রুপ ‘বি’ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, ওমান। গ্রুপ ‘সি’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, উগান্ডা। গ্রুপ ‘ডি’ দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, নেপাল। প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের কোনো বৈশ্বিক আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে। সেখানকার টাইম জোনের সঙ্গে এই উপমহাদেশের টাইম জোনের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে যেদিন নবম টি২০ বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে, বাংলাদেশে সেটা হয়ে যাচ্ছে পরদিন! ১ জুন যুক্তরাষ্ট্রে যেদিন ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধন, টেক্সাসে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হবে প্রতিবেশী কানাডা। কিন্তু ১১ ঘণ্টা এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশে এই ম্যাচটি শুরু হবে ২ জুন সকাল সাড়ে ৬টায়। একইসঙ্গে বিশ্বকাপ চলবে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ফলে দেখা যাবে কোনো ম্যাচ বাংলাদেশ সময় রাতে, এমন কি মধ্যরাতেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমে গ্রুপ পর্বের খেলা। যা চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত, এ সময় প্রতিদিন অন্তত একটি ও কখনো কখনো দুই বা তিনটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচগুলো সাধারণত শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টা, সকাল সাড়ে ৬টা, রাত সাড়ে ৮টা, সাড়ে ৯টা, রাত ১১টা ও রাত ১টা থেকে। আলাদা টাইম জোন বলে কথা। এরপর সুপার এইট পর্ব, যা চলবে ২৫ জুন পর্যন্ত। এ সময়ও বেশিরভাগ দিন দুটি করে ম্যাচ, তবে খেলার সময়সূচি ভোর সাড়ে ৬টা আর রাত সাড়ে ৮টাতেই নির্দিষ্ট থাকবে। দুটি সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে একই দিন ২৭ জুন। আর ফাইনাল হবে শনিবার, ২৯ জুন বার্বাডোজে সকাল সাড়ে ১০টায়, যা বাংলাদেশ সময় আসলে রাত সাড়ে ৮টা।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চসংখ্যক দল অংশ নেওয়ায় পুরনো ফরম্যাটও ফিরে এসেছে এবার। পাঁচ দলের গ্রুপ পর্বে প্রতিটি দল খেলবে ৪টি করে ম্যাচ। সেখান থেকে গ্রুপের শীর্ষ দুই দল যাবে পরের পর্ব সুপার এইটে। এই পর্ব থেকে বিশ্বকাপ পুরোপুরি ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হবে। সুপার এইটেও চারটি করে দল নিয়ে দুটি আলাদা গ্রুপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আটটি দলকে (ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা) র?্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে আগেই বাছাই করেছে আইসিসি, যাতে টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা ও সূচি নির্ধারণে সুবিধা হয়। এই দলগুলোই যদি সুপার এইটে যায় তাহলে তারা সেই বাছাইয়ের ভিত্তিতে গ্রুপ ১ অথবা গ্রুপ ২এ যাবে। এক্ষেত্রে গ্রুপপর্বে টেবিলের শীর্ষে থাকা অথবা দুইয়ে থাকা কোনো ভূমিকা রাখবে না। তবে সুপার এইটে যে দুটি গ্রুপের শীর্ষ চার দল সেমিফাইনালে যাবে, সেখানে গ্রুপ রানারআপ অন্য গ্রুপের চ্যাম্পিয়নের মুখোমুখি হবে। পুরো টুর্নামেন্টে ম্যাচ জয়ের জন্য থাকছে ২ পয়েন্ট, ফলাফল না হলে ১ পয়েন্ট আর হেরে গেলে কোনো পয়েন্ট যোগ হবে না। টি২০ বিশ্বকাপে ম্যাচ টাইয়ের কোনো সুযোগ নেই, এ রকম হলে সুপার ওভারে নিষ্পত্তি হবে ম্যাচ।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩টি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬টি ভেন্যুতে হবে বিশ্বকাপ। যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম ক্রিকেটের কোনো আইসিসি ইভেন্ট হচ্ছে। মোট ৫৫টি ম্যাচের মধ্যে ১৬টি অনুষ্ঠিত হবে এখানকার তিনটি শহরে। ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক ও ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি স্টেডিয়াম (৪০ হাজার ধারণক্ষমতা), নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশন্যাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম (৩৪ হাজার ধারণক্ষমতা) ও টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে (১৫ হাজার ধারণক্ষমতা) হবে ম্যাচগুলো। এর মধ্যে নিউ ইয়র্কের স্টেডিয়ামটা বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে পিচ এনে বসানো হয়েছে ও অস্থায়ী কিছু আসন বসানো হয়েছে গ্যালারিতে। অন্যদিকে ক্রিকেটের পুরনো দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬টি ভেন্যুতেই অনুষ্ঠিত হবে বেশিরভাগ ম্যাচ। ক্যারিবীয়ানে ভেন্যুগুলো হলোÑ অ্যান্টিগা ও বারবুডার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ড স্টেডিয়াম (১০ হাজার ধারণক্ষমতা) বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভাল (২৮ হাজার ধারণক্ষমতা), গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম (২০ হাজার ধারণক্ষমতা), সেন্ট লুসিয়ার, ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম (১৫ হাজার ধারণক্ষমতা), সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রানাডাইন্সের অ্যারন্স ভেল প্লেয়িং ফিল্ড (১৮ হাজার ধারণক্ষমতা) ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমি (১৫ হাজার ধারণক্ষমতা)। পাশাপাশি এবারের বিশ্বকাপে যে নিয়মগুলো জেনে রাখতে হবেÑটুর্নামেন্টটি টি২০ ফরম্যাটের, প্রতিটি দল এখানে ২০ ওভার করে ব্যাট করার সুযোগ পাবে, যদি তারা এর আগেই অলআউট না হয়ে যায় অথবা তার আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। প্রতিটি ইনিংস শুরু হবে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে দিয়ে এবং সেই সময়ে যথারীতি ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাধকতা থাকবে। প্রতিটি ম্যাচ শেষ হতে হবে ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিটের মধ্যে, একেকটা ইনিংস শেষ করার সময় ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট, এর সঙ্গে ইনিংস বিরতি থাকবে ২০ মিনিট।
গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই প্রথমবার বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে থাকছে ‘স্টপ ক্লক’, অর্থাৎ একটা ওভার শেষ হওয়ার পরের ১ মিনিটের মধ্যে ২য় ওভার শুরু করার জন্য বোলার প্রস্তুত থাকবে। তিনবার ব্যর্থ হলে পড়তে হবে পেনাল্টির মুখে। বরাবরের মতোই মুখোমুখি হওয়া দুই দল দুটি করে রিভিউ পাবে। ২০ ওভার শেষে দুই দলের স্কোর সমান হলে খেলা সুপার ওভারে যাবে (প্রতিটি দল ৬টি করে বল খেলবে, যারা বেশি রান করবে তারাই জিতবে)। যদি সুপার ওভারও টাই হয়, তবে কোনো দল জয়ী না হওয়া পর্যন্ত সুপার ওভার চলবে।
খেলার ফলাফল আসার জন্য প্রতিটি দলকে অন্তত ৫ ওভার করে খেলতে হবে, তবে সেমি ফাইনাল ও ফাইনালের জন্য সেটি হবে ১০ ওভার। আর এই সময়ের পর আবহাওয়ার জন্য খেলা আর শুরু করা না গেলে ডিএলএস পদ্ধতিতে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হবে। শুধুমাত্র প্রথম সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য একদিন করে রিজার্ভ ডে বরাদ্দ আছে। আর ২য় সেমিফাইনালের জন্য অতিরিক্ত ২৫০ মিনিট রাখা হয়েছে। যদি ভারত সেমিফাইনালে যায় তাহলে সুপার এইটের ফলাফল যাই হোক না কেন পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ২য় সেমিফাইনাল খেলবে। ২৯ জুন শুক্রবার বার্বাডোজের কেনিংটন ওভালে ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপের।