বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে চীনের প্রভাব

আন্তর্জাতিক

ইকোনমিক টাইমসে নিবন্ধে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা
সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, চীনের প্রভাব বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতার কথাও তুলে ধরেছেন।

শ্রিংলা সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি বলেন, এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, তৃতীয় বারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বিদেশ সফর ভারতে হবে। কারণ গত ৪০ বছরে যা হয়নি, নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনার ১০ বছরের শাসনামলে তার চেয়ে বেশি দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে দুই দেশ। দুই প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। শ্রিংলা লিখেছেন, বাংলাদেশকে ‘ঘনিষ্ঠ ও মূল্যবান’ প্রতিবেশী হিসেবে দেখে ভারত। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে ঢাকা-দিল্লির অপরিহার্য অংশীদার। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের বড় প্রতিবেশী এবং বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায়)। এশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। শ্রিংলা লিখেছেন, ভারতের কাছে বাংলাদেশ তার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির একত্র হওয়ার জায়গা। একই সঙ্গে অঞ্চলের সবার জন্য নিরাপত্তানীতি (সাগরনীতি) এবং ‘ইন্দো-প্যাসেফিক’ ভিশনের জন্যও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক হাইকমিশনার বলেন—ক্রমবর্ধমান উগ্রবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ভারতকে হুমকি দিচ্ছে। এই হুমকি পশ্চিমবঙ্গ ও আসামসহ এই অঞ্চলে চোখ রাঙাচ্ছে। শ্রিংলা বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব বৃদ্ধিকে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এর প্রভাবে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে বিরূপ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের কথা রয়েছে। টানা চতুর্থ বার ক্ষমতায় বসার পর এটা হবে কোনো দেশে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর। নিবন্ধে লেখা হয়েছে, দিল্লি সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সই করে ভারত। উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে একটি ‘রূপকল্প ঘোষণা’ গ্রহণ করে।

রেলযোগাযোগ, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, স্যাটেলাইট ও সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। রেলযোগাযোগ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন শহরসহ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যাত্রী ও পণ্যবাহী রেলের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতা, দুর্যোগ মোকাবিলা, সহনশীলতা ও প্রশমন এবং মৎস্যক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে গৃহীত কিছু কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলেও নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদিকে উদ্ধৃত করে নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘২০৪৭ সালের বিকশিত ভারত’ এবং বাংলাদেশের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ দুই দেশের ভবিষ্যত্বাদী দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধির পরিবেশ, সম্পর্কে স্থায়িত্ব এবং সুনীল অর্থনীতি পারস্পরিকভাবে ভাগ করে নেওয়ার কথা বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *