প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বনন্দিত কর্মসূচি কমিউনিটি ক্লিনিক

জাতীয় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

পিআইবি ফিচার


খাদিজা আক্তার

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা আছিয়া খাতুন (১৮) চাকুরি করেন ভিশন গার্মেন্টসে। থাকেন মিরপুর-১৩ এর একটি বস্তিতে। অফিস শেষে সেদিনও আছিয়া প্রতিদিনের মতোই রাতের খাবার তৈরি করছিলেন। হঠাৎ পেটে ব্যথা শুরু হলে পেটে হাত দিয়ে বসে পড়েন মাটিতে। স্বামী দৌড়ে এসে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে আছিয়া বলেন মনে হয় ‘পেইন’ উঠছে। ‘তুমি আমাকে হাসপাতালে নিয়া চলো।’ হঠাৎ এ ধরনের ব্যথা উঠায় ইসহাক বুঝতে পারছিলেন না কোথায় নেবেন। পাশের ঘরের ভাবি এসে জানালেন পাশেই থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা। তার কথায় ইসহাক আছিয়ার প্রথম সন্তান হলো কমিউনিটি ক্লিনিকে। সত্যিই প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় এক অনন্য মডেল হিসাবে কমিউনিটি ক্লিনিক আজ বিশ্বনন্দিত। ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ যখন এক বিপুল জনসংখ্যার চাপে দিশেহারা হয়ে পড়ার কথা, সেই সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার এই মডেলকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে প্রতিবছর সাড়ে সাত কোটি রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। আর দুই কোটির বেশি রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করা হয়। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের বিনামূল্যে ৫৭ প্রকার ওষুধ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণের জমিতে সরকারের টাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়।স্থানীয় জনগণই এই ক্লিনিক পরিচালনা করেন। এতে করে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা সম্পর্কে এলাকাবাসীর মধ্যে যেমন সচেতনতা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে সেবার গুণগত মান বজায় রাখতেও তারা ভ‚মিকা রাখেন। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন, বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় দেশের গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার ২০১৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসহায়তা ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করেছে। ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। ডা. আসিফ বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত একটি উদ্যোগ। বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এই অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করেন, যা সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুফল ভোগে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব যখন দিশেহারা তখনও বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্যসেবায় এক অভাবনীয় ভ‚মিকা রেখেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচিকে সফল করে তুলেছে এই কমিউনিটি ক্লিনিক। (পিআইবি ফিচার)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *