ট্রাফিক পরিদর্শক তুহিন দম্পতির ৪ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

আইন আদালত জাতীয় পরিবহণ-পর্যটন ও যোগাযোগ

ফরিদপুর ব্যুরো

ফরিদপুরে পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) তুহিন লস্কর ও তার স্ত্রী জামিলা পারভীন কুমকুমের নামে প্রায় চার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম।

এর আগে রোববার ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর আলী খানের নির্দেশে এ সম্পত্তি জব্দ করে দুদক।

দুদকের ফরিদপুর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তুহিন লস্কর ও তার স্ত্রীর নামে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ দেন দুদকে। অভিযোগ পাওয়ার পর ফরিদপুর দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ইমরান আকন অনুসন্ধান করে স্থাবর ও অস্থাবরসহ প্রায় চার কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পান।

এ সমস্ত সম্পত্তি জব্দ করার জন্য ফরিদপুর দুদক গত ৭ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর আদালত সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ সেপ্টেম্বর এ সম্পত্তি জব্দ করে দুদক। স্থগিত করে দেওয়া হয় কয়েকটি ব্যাংক হিসাব।

জব্দ করা স্থাবর সম্পত্তির প্রায় সবই পুলিশ কর্মকর্তা তুহিন লস্করের স্ত্রী জামিলা পারভীনের নামে। এর মধ্যে খুলনা, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় তার বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৮১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। এছাড়া ব্যাংকে টাকা ও স্থায়ী আমানত রয়েছে ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকার। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ফরিদপুর শাখায় সঞ্চয়ী হিসেবে ৩৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা এবং ওই ব্যাংকের অপর একটি হিসাবে স্থায়ী আমানত রয়েছে ৪০ লাখ টাকা।

দুদক জানায়, তুহিন লস্করের স্ত্রী জামিলার আয়ের তেমন কোনো উৎস না থাকলেও ভুয়া ব্যবসা দেখিয়ে এই সম্পদ তিনি অর্জন করেছেন।

জব্দ করা ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে টিআই তুহিন লস্করের নিজের নামে ব্র্যাক ব্যাংক ফরিদপুর শাখায় একটি হিসেবে ২৬ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯১ টাকা রয়েছে।

জব্দ করা স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তুহিনের স্ত্রীর নামে রয়েছে- আনুমানিক এক কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের খুলনার হাউজিং এস্টেট এলাকার গোয়ালপাড়া মৌজায় ১ দশমিক ৮ কাঠা জমির ওপর দুই ইউনিটের পাঁচতলা বাড়ি, আনুমানিক ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের খুলনার খালিসপুরের গোয়ালপাড়া মৌজায় ১ দশমিক ৮ কাঠা জমি, আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মৌজায় এক হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা মূল্যের শহরের হাবেলি গোপালপুর মৌজায় ১২শ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা মূল্যের শহরের হাবেলী গোপালপুর মৌজায় ৩৫ শতাংশ জমি, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের গোপালগঞ্জ সদরের খাটারা মৌজায় ৫ দশমিক ২০ শতাংশ জমি, ৯ লাখ ১৮ হাজার ২২৫ টাকা মূল্যের ওই একই মৌজায় ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ৬ লাখ ১২ হাজার ২২৫ টাকা মূল্যের ৫ দশমিক ২ শতাংশ জমি ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর দুদকের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, টিআই তুহিন লস্কর ও তার স্ত্রীর নামে আরও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এজন্য এ দম্পতির বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। পরিপূর্ণ হিসাব পাওয়ার পর এ ব্যাপারে নিয়মিত মামলা করা হবে।

তিনি বলেন, তুহিন বা তার স্ত্রী যাতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে না পারেন কিংবা স্থাবর সম্পত্তি অন্যের নামে হস্তান্তর করতে না পারেন এজন্য এ সম্পত্তি জব্দ করে রাখা হলো।

এ বিষয়ে টিআই তুহিন লস্কর যুগান্তরকে বলেন, আমার সব সম্পত্তি বৈধ। আমার সারা জীবনের সঞ্চয় ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে। যে পরিমাণ টাকার কথা বলা হয়েছে আদতে তা সত্য নয়; যা তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *