শাওন মাহমুদ
অন্তবর্তিকালিন সরকারের সবচেয়ে নিরপেক্ষ এবং সৎ ও পরিচিত উপদেষ্টা এম সাখাখাওয়াত হোসেন রাজধানী ফার্মগেটের খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ’র সংলাপে তরুণদের রাজনৈতিক দলগঠন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তাদের নিরুৎসাহিত করা ঠিক নয়। আমরা মনে করি নতুন রক্ত প্রয়োজন। তাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ তাদের উৎসাহিত করুন। তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাদের যদি উৎসাহিত না করেন, তাহলে আমরা এ জিনিসই (আওয়ামী লীগের পতন) দেখব। আজ না হয় ১০ কিংবা ১৫ বছর পরে আবারও দেখব।’
তাঁর এই কথার সঙ্গে আমি পরোপুরি এক মত হতে পারলাম না।তরুনদের রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত করবেন নাকি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা, রাজনীতি করতে উৎসাহিত করবেন? এখানে গুরুত্বের জায়গা কোনটি? এখানেই আমার প্রশ্ন। কিছু উপদেষ্টা সহ অন্যান্যরাও আজকাল এতটাই স্ববিরোধীতা রোগে আক্রান্ত যে, মাঝেমধ্যে মনে হয় এরা, এইমাত্র ঘুমের ভিতর স্বপ্নে আদেশ প্রাপ্ত হয়ে দেশবাসির জন্য সবক হিসেবে বিষয়টি প্রচার করছেন! প্রথম প্রথম তারা ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি-না তা নিয়েনিয়ে সান্ধ্যভাষায় কথা বলতে থাকেন।একসময় দেখা গেল ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্ম কাণ্ড স্থগিত করলেন এবং পরে এক ফরমান বলে তা নিষিদ্ধও করলেন।কারণছিলো ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনীর অপকর্ম। এক সময় দেখা গেলো ছাত্রলীগের অপকর্মের শাস্তি হিসেবে দলগত ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হল। কিন্তু অপরাধীরা বাহবা পাওার সঙ্গে, অন্য একটি দলের ছাত্রনেতা হিসেবে আবির্ভূত হল!
প্রথম কয়দিন আলোচনায় ছিলো, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ভিতরে গণতন্ত্রচর্চাহীনতার কারণেই দেশে এতো বছরেও গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি।’ এই আলোচিত বিষয়টি ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ভাবা হয়েছিলো, রিাজনৈতিক দলগুলোতে যাতে তাদের দল গঠনে গনতান্ত্রিক পদ্ধতির চর্চায় আসে, সে জন্যে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দলগঠনের নীতিতে কিছু নিয়ম বেধেদেয়ার ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু, আমরা এখন কি দেখছি? তরুণরা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করছে, তাদের দলে নেতৃত্বে থাকবে সেই পরিচিত তারা তরাই।প্রক্রিয়াও সেই পূর্ববৎ! পৃষ্ঠপোষকতায়, উপদেষ্টা মণ্ডলি, রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধা, প্রয়োজনে হালকা ভয় ডরের খেলা! গণতন্ত্রের যাত্রায় এর সুফল কতটুকু ঘরে আসবে তা, দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।তবে, অতীত থেকে কিছুতো ধারণা করাই যেতে পারে!
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের কথা বলেন, অথচ, নিজেরা থাকছেন অপরিবর্তনীয়! যেমন , কারও লেখায় ক্ষমতায় সম্পৃক্তগণ এবং যারা মনে করেন, তারাই এখন ক্ষমতায়। তাদের মানসিক চাহিদা মতো লেখা না হলেই তাকে, আওয়ামীলীগার হিসেবে চিহ্নিত করা একটা নয়া সস্তা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রাথমিক এবং ন্যূনতম বৈশিষ্ট্যও বেশির ভাগ এক্টিভিস্ট গ্রহণে অনিচ্ছুক। আওয়ামীলীগের অতি উৎসাহী নেতারা যেমন ভিন্নমতকে বর্দাস্ত করতে পারেনি বলেই তাদেরকে বর্তমানে মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এটা কেউই মনে রাখে না। কেউ মনে রাখতে চায় না, “অপরের কাছে তুমি যা চেয়েছো, তা পাওনি বলেই তুমি আজ তার, জায়গায় ক্ষমতায় এসেছো।” তুমিও তাদের মতোই অপরের ভিন্নমতকে বর্দাস্ত করতে পারছো না। গণতন্ত্র মানেই যে পরমতে শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা, সেই সৌর্ন্দযের জন্য ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল হওয়ার বাণী বর্তমান ক্ষমতাসীনরা সহ, কোনো প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রকি মিডিয়াও কি কখনো বলেন বা বলছেন? বলেন না কারণ, বল্লেই পিঠে ট্যাগ সেঁটে দেয়া হবে।এ ও এক ধরণের ভয়। ভয়ের সমাজে গণতন্ত্র ? বা, গণতান্ত্রিক সমাজে ভয় ! এটাকি কখনো হয়?