সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল

আইন আদালত জাতীয় রাজনীতি

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ নিষ্পত্তি
সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

বহুল আলোচিত বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের যে ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল তা আবার সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে এলো। সংবিধানে এসংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল হলো।এ রায়ের ফলে দীর্ঘ আট বছর পর নিষ্পত্তি হলো আপিলের রিভিউ ।
রবিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
রায় ঘোষণার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এটা নিয়ে কিছুটা কনফিউশন ছিল। আদালতের রায়ের কারণে এই কনফিউশনটা দূর হয়েছে। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এখন পুরোপুরি অপারেশনাল করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের হাইকোর্টে কিছু বিচারক আছেন, তাদের ব্যাপারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রচুর কমপ্লেইন রয়েছে।

তারা জুলাই গণবিপ্লবে যে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ছিল, সেই শক্তির নিপীড়ক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিলেন। কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। এজন্য ছাত্র-জনতার অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। এখন এ সমস্ত ক্ষোভ সাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার পথ খুলে গেছে।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান জানান, এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে তা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, বিচারপতিদের পদত্যাগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যবেক্ষণ করবেন।
আদালতে পিনপতন নীরবতা ॥ শুনানির উপলক্ষে আদালতে ছিল পিনপতন নীরবতা। রবিবার সকাল ৯টায় আপিল বিভাগে প্রবেশ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতি। আদালত বসার পর প্রথমেই মেনশন আইটেমগুলো শোনা হয়। এর পর সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে ১ নম্বর আইটেম অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ মামলার ওপর শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক এ মামলার শুনানি করতে এসে পুরনে স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমার প্রয়াত সিনিয়র ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ এই রিভিউ আবেদনের ৪৪টি গ্রাউন্ড আছে শোনার পর বলেছিলেন, রিভিউ আবেদনে যখন এত গ্রাউন্ড থাকে, তখন তা গ্রাউন্ডলেস। এখন সাপ্লিমেন্টারিসহ মোট ৯৪টি গ্রাউন্ড রয়েছে। আমি একটি পড়ব।’
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ ষোড়শ সংশোধনীকে কীভাবে হস্তক্ষেপ করছে? আপনারা রিভিউ ফিরিয়ে নেবেন না?’ অ্যাটর্নি জবাবে বলেন, ‘না।’ এর পর এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি গ্রাউন্ডের ওপর শুনানি করেন। ১৯৭২ সাল থেকে কীভাবে বিচারপতি রেজিগনেশন হয়েছে তার ডকুমেন্টস তুলে ধরে বলেন, ‘বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করতে পারবেন। অপসারণের বিষয়ে আমরা এডিশনাল গ্রাউন্ড নিয়েছি। কেননা, আগে রাষ্ট্রপক্ষ যে রিভিউ করেছে, তার গ্রাউন্ডগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং আমি মনে করি, এগুলোর দরকার নেই।’
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের পরও সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ছিল। কিন্তু আগের আইনমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এটা মানেন না। তার মতামত ছিল অভিশংসন সংসদ করবে।’বারের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানি করেন। তিনি আপিলের রায়ের অপারেটিং পার্ট পড়ে শোনান। ২০০৮ ও ২০১৬ সালে দুটি সংবিধানের কপি তুলে ধরে বলেন, ‘সংবিধান বিক্রির জন্য না। কিন্তু বাজারে বিক্রি করে, বাজারে পাওয়া যায়। যে যেমন পারছে বিক্রি করছে।

জাতির সঙ্গে প্রতারণা চলছে। আদালত জানতে চান, ‘পরবর্তীকালে অভিশংসন নিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা দেখা দিলে করণীয় কী হবে?’ জবাবে কাজল বলেন, ‘আপনারা চাইলে নতুন করে কিছু অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। জাজেস কোড অব কনডাক্টকে তারা কাউন্সিলে এনেছে।’ তখন মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘মূল টার্গেট ছিল বিচারপতিদের কীভাবে অপসারণ করা যায়। এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে কিনা তা প্রশ্ন ছিল। এর পর আদালত ১০ টা ৫১ মিনিটে রিভিউ আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন। পর্যবেক্ষণে আদালত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২-৮ উপ-অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনেন।
জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন শুনানিতে মত দিয়েছেন সিনিয়র অ্যাভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি জানান, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ (২,৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮) অনুচ্ছেদ বহাল করা হয়েছে। আর পর্যবেক্ষণসহ রিভিউ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। শুনানিতে অংশ নেওয়া সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এই রায়ের ফলে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রইল এবং বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফিরল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় দেন। বহুল আলোচিত ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে, দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে আপিল বিভাগের দেওয়া সে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদনে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে ৯৪টি যুক্তি দেখিয়ে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছিল।
আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অপর ৯ অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।
রায়ে আরও বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সাংসদরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সাংসদদের সব সময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে।
রায়ে আরও বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল। মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন চলে আসবে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ করবে- এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন।
বিচারপতি অপসারণে যেভাবে কাজ করে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ॥ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ নিষ্পত্তির পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বহাল করা হয়েছে। এখন এই কাউন্সিলের কার্যক্রম কেমন হবে সে বিষয়টি খোলাসা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। রিভিউ নিষ্পত্তির পর রবিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে কোনো অভিযোগ করলে বা পেলে তারা প্রাথমিক একটি অনুসন্ধান করবেন। যাচাই বাছাই করে দেখবেন যে, অসদাচরণ বা দুর্নীতি (অর্থনৈতিক বা বুদ্ধিভিত্তিক) পাওয়া গেছে কি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *