কাটা তারের বেড়া নিয়ে বিএসএফের বাড়াবাড়ি, প্রতিরোধে প্রস্তুত বিজিবি

আইন আদালত আন্তর্জাতিক জাতীয় রাজনীতি

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক


লালমনিরহাট সীমান্তে গতকাল সতর্ক পাহারায় বিজিবি সদস্যরা 

সীমান্তে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ বেড়া নির্মাণের ঘটনায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ঢাকা। গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন তাঁকে তলব করেন। ভারতীয় হাইকমিশনার মন্ত্রণালয়ে গেলে তাঁর কাছে বাংলাদেশের প্রতিবাদ জানানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডর, নওগাঁর পতœীতলাসহ পাঁচ সীমান্তে শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে সম্প্রতি ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টার প্রতিবাদে তলব করা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বেরিয়ে প্রণয় ভার্মা গণমাধ্যমকে বলেন, অপরাধহীন সীমান্ত নিশ্চিত করা; চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল ও পাচারের চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য আমাদের নিরাপত্তায় সীমান্তে বেড়া নির্মাণের বিষয়ে বোঝাপড়া আমাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং বিজিবি যোগাযোগ করছে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, দুই পক্ষের যে সিদ্ধান্তগুলো আছে, তার বাস্তবায়ন হবে এবং অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। এর আগে, সীমান্তের পাঁচ স্থানে ভারতের বিধিবহির্ভূত বেড়া নির্মাণের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ঠেকানো হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আমাদের বিজিবি খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় এই জায়গায় থেকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ভারত। এ নিয়ে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে একটা আলোচনা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনোভাবেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারবে না। তবে ১৫০ গজের বাইরে হলে আপত্তি থাকবে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম সীমান্ত নির্দেশাবলি-১৯৭৫ অনুযায়ী উভয় দেশের শূন্য লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ছাড়াও উভয় দেশের প্রয়োজনে শূন্য লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে একে-অপরের সম্মতি গ্রহণের বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে বিস্তারিত তথ্য জানাবে এবং নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ জানাবে। দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর বিকালে হাইকমিশনারকে তলব করা হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ভারত সীমান্তের কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের ৩ হাজার ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তে ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। বাকি ৮৮৫ কিলোমিটার সীমান্তে ভারত কাঁটাতারের নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মোট চারটি চুক্তি আছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে আমাদের প্রচুর শক্তি রয়েছে। বিজিবির সঙ্গে জনগণও কঠোরভাবে প্রতিহত করছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার ….বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে রাতে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সীমান্তে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত। সম্প্রতি সীমান্তে বাংলাদেশের একজন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) ভারতের দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের কার্যকলাপ, বিশেষ করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অননুমোদিত চেষ্টা এবং বিএসএফের সংশ্লিষ্ট অপারেশনাল পদক্ষেপ, সীমান্তে উত্তেজনা ও ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চেতনাকে ক্ষুণœ করে। সুনামগঞ্জে বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশি নাগরিকের হত্যার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে ও সব সীমান্ত হত্যাকান্ডের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এটিও গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বারবার অপ্রাণঘাতী কৌশল অনুসরণ এবং হত্যা বন্ধ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এ ধরনের হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *