সুবর্ণবাঙলা ডিজিটাল ডেস্ক
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজ সোমবার বিকেলে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এ জন্য তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
এর আগে রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মী অর্ণব সিংহ রায়কে মারধর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, জাকির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ছিলেন। সোমবার বিকেলে তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দপ্তরে নিয়ে আসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এরপর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা, প্রক্টর এবং শিক্ষার্থীদের সহায়তায় জাকিরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. শাখাওয়াত হোসেন। মামলায় নিজেকে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক বলে দাবি করেন। এ মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটিতে ১১ নম্বর আসামি করা হয় জাকির হোসেনকে। রোববার বিকেলে মারধরের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া অর্ণব সিংহ রায় একই মামলার ১২ নম্বর আসামি। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনকে। মামলার আসামি হলেও জাকির হোসেন এত দিন নিয়মিত কার্যালয়ে এসেছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাঁকে (জাকির) বলেছেন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। একটা পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডিসহ সবাই মিলে প্রশাসনের সবার সঙ্গে কথা বলে তাঁকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের অনুরোধ করি। অনুরোধের পর তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক মো. আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, জাকির হোসেন আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালান। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি তিনি। এ জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাঁকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ জাকির হোসেন আমার দপ্তরে আসেন। তাঁর নামে মামলা থাকায় সবার সঙ্গে আলোচনার পর তিনি নিজেই বলেন তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। পরে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে নিয়ে গেছেন।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া একটি মামলায় এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি জাকির হোসেন। ওই মামলা বর্তমানে তদন্ত করছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। আমরা জাকিরকে ডিবি পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁকে আদালতে পাঠানোর পরবর্তী ব্যবস্থা ডিবি গ্রহণ করবে।’
কুমিল্লা জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ করিম খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।