টেকনাফে পাঁচ রোহিঙ্গা অপহৃত, একজনের কবজি কেটেছে দুর্বৃত্তরা

আইন আদালত জাতীয়

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ি জনপদে তিন বন্ধুকে হত্যার রেশ না কাটতেই এবার এক রোহিঙ্গা যুবকের হাতের কবজি কাটল অপহরণকারীরা। এর আগে ওই যুবকসহ পাঁচ রোহিঙ্গাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। অপহৃত বাকি চার রোহিঙ্গাকে পাহাড়ের আস্তানায় আটকে রেখে জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে। অন্যথায় আরও ভয়াবহ পরিণতি হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অপহরণকারীদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কয়েকজন বাংলাদেশিও আছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

কবজি বিচ্ছিন্ন করা কিশোরের নাম জাহাঙ্গীর আলম (১৬)। সে আলীখালী ২৫ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক ডি-২২–এর সামসু আলমের ছেলে। বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।

জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলে, শুক্রবার আশ্রয় শিবিরের ডি-২০ ব্লকের রোহিঙ্গা রহিম উল্লাহর দোকানের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল অপহৃত রোহিঙ্গারা। রাত ৮টার দিকে মুখোশপরা ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হঠাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাঁচ রোহিঙ্গাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্গম পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। রোহিঙ্গা নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের জানালেও তাদের ধরা যায়নি।

পরে ১০ অপহরণকারী অপহৃতদের কাঠের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এভাবে রাতভর চলে অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে শনিবার ভোরে তার বাম হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তারা হাতটি পলিথিনে মুড়িয়ে জাহাঙ্গীরকে দিয়ে দেয়। এ সময় অপহরণকারীরা জাহাঙ্গীরকে বলে, দ্রুত অপহৃত অপর চারজনের জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে সে যেন তাদের পরিবারকে খবর দেয়। অন্যথায় তাদের আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে।

জাহাঙ্গীর জানায়, সে বিচ্ছিন্ন হাতটি নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কোনো রকম বাড়িতে ফিরে এলে আশপাশের রোহিঙ্গারা পুলিশকে খবর দেয়। হাসপাতালে জাহাঙ্গীরের পাশে বসে অঝোর কাঁদছিলেন তার মা রেহেনা খাতুন। তিনি বলেন, তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। জাহাঙ্গীর দ্বিতীয় সন্তান। অপহরণকারীরা জাহাঙ্গীরকে কীভাবে নির্যাতন করেছে, তা তার শরীর দেখলেই বোঝা যায়।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে জাহাঙ্গীরের বাঁ হাতের কবজি কেটে ফেলা হয়েছে, তাতে রক্তক্ষরণ হয়েছে বেশ। আঘাতে হাত থেঁতলে গেছে। শনিবার রাতে চিকিৎসা দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। রোববার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পর্যালোচনা করে হাতের অস্ত্রোপচার করা হবে।

অপহৃত অন্যরা হলেন– আলীখালী ২৫ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক ডি-২২-এর বাসিন্দা নুর হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুস (৩২), একই ব্লকের সামসু আলমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (১৬), মোহাম্মদ রফিকের ছেলে মোহাম্মদ সুলতান (২৪), আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৬) ও মোহাম্মদ সৈয়দের ছেলে আনোয়ার ইসলাম (১৮)।

ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, মুক্তিপণের জন্য সন্ত্রাসীরা অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। একাধিক রোহিঙ্গা নেতা জানান, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে রোহিঙ্গা ছাড়াও কয়েকজন বাংলাদেশিও (হোয়াইক্যং ও হ্নীলা এলাকার বাসিন্দা) আছে। মুক্তিপণের জন্য তারা বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অসহায় রোহিঙ্গাদেরও অপহরণ করছে। দুর্গম পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা আস্তানা গেড়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, অপহরণের পর শুক্রবার রাতেই পুলিশ টেকনাফের পাহাড়ে অভিযান শুরু করে। তবে রোববার পর্যন্ত অপহৃতদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, ‘আলীখালী ক্যাম্প থেকে অপহৃত পাঁচ রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের তৎপরতা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *