নিজস্ব প্রতিবেদক
দলের কর্তৃত্ব নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ অব্যাহতি-পাল্টাঅব্যাহতিতে গড়িয়েছে। গত দুই দিনে তিনজন নেতাকে অব্যাহতির ঘটনায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। পাল্টাপাল্টি অব্যাহতির ঘটনায় কার্যত ভেঙেই গেল গণ অধিকার পরিষদ।
সোমবার রাতে রেজা কিবরিয়াকে অব্যাহতি দেওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার নুরুল হক নুরকে পাল্টা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করা হাসান আল মামুনকে। তিনি এত দিন গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। একই সঙ্গে দলের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকেও দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নুরপন্থীরা সোমবার রাতে রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে নুর ও রাশেদকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
দলের নেতারা জানান, নুরের একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতা, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ, আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা কারণে দলে তাঁর বিরোধী একটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। রেজা কিবরিয়াকে অব্যাহতির ঘটনায় এই পক্ষ হঠাৎ তৎপর হয়ে ওঠে।
রেজা কিবরিয়া তাঁদের উদ্যোগেই দুই নেতাকে বহিষ্কার করেন। গতকাল সন্ধ্যায় নুরবিরোধীরা রাজধানীতে বৈঠকে বসেন। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন কম্বোডিয়ায় অবস্থান করা রেজা কিবরিয়া। বৈঠকে নুর ও রাশেদকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আহ্বায়ক হিসেবে রেজা কিবরিয়া দুই নেতাকে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করে তা গণমাধ্যমে পাঠান।
এ সিদ্ধান্তকে অসাংগঠনিক বলে মন্তব্য করেছেন নুরুল হক নুর। গণমাধ্যমে পাঠানো অডিও বক্তব্যে নুর বলেন, বিদেশে থেকে রেজা কিবরিয়া এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন না। এটা তাঁর মনগড়া সিদ্ধান্ত।
নুরের অভিযোগ, রেজা কিবরিয়া গণ অধিকার পরিষদের ১২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ২১ জনকেও ভালোভাবে চেনেন না, নামও বলতে পারবেন না। ৫৪ জেলা কমিটির ১০ জনকে চেনেন কি না সন্দেহ! গত পৌনে দুই বছরে রেজা কিবরিয়া সংগঠনে পৌনে দুই লাখ টাকাও খরচ করেননি। ২০টা কর্মসূচিতেও ছিলেন না।
নুরপন্থী নেতা, দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, সাংগঠনিকভাবে কেউ নুর ও রাশেদকে বহিষ্কার করতে পারেন না। এই সিদ্ধান্তের কোনো সাংগঠনিক বৈধতা নেই। আবু হানিফ জানান, আগামী ২৩ জুন জেলা পর্যায়ের নেতাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গণ অধিকার পরিষদের নুরবিরোধী পক্ষের নেতারা দাবি করেন, গতকালকের বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, গণ অধিকার পরিষদ নেতাদের মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ এবং বিভিন্ন সময় হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, জেলও খেটেছেন কিন্তু দলে মূল্যায়িত হননি এমন বিক্ষুব্ধ নেতারাও ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিবের দায়িত্ব পাওয়া হাসান আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। ডাকসুর নির্বাচনও তাঁর নেতৃত্বে করেছিলেন নুররা। তিনি তাঁদের সবার নেতা। তাই বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলকে বাঁচাতে তিনি হাল ধরেছেন। কারণ, তরুণ প্রজন্মের এই দল গোয়েন্দানির্ভর দল হতে পারে না।
রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক এবং নুরুল হক নুরকে সদস্যসচিব করে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করে গণ অধিকার পরিষদ। প্রতিষ্ঠার পর রাজনীতিতে বেশ সাড়া জাগালেও দলের কর্তৃত্ব নিয়ে রেজা ও নুরের মধ্যে মতের মিল ছিল না। তাঁরা একে অপরকে ‘সরকারের এজেন্ট’ বলে অভিযোগ তোলেন।
গতকাল নুর ও রাশেদকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণ অধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্র, ২১ দফা কর্মসূচি, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং মূলনীতিবিরোধী কাজ করা, বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান, মানি লন্ডারিং আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠা, ইসরাইলসহ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সভা আয়োজন ও অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনোনয়ন করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
অভিযোগ তদন্তে কমিটি
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নুরুল হক নুর এবং রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন কড়া হয়েছে। দলের সচেতন সদস্য নামে নেতারা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।