ইতালি যে কারণে ল্যাবে তৈরি মাংস নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে 

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

ল্যাবে তৈরি মাংস ও সকল ধরনের কৃত্রিম খাদ্য নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ইতালি। মূলত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাকৃতিক খাবারে গুরুত্ব প্রদান ও দেশীয় খাদ্যের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। খবর বিবিসির।

সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিলটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইতালির ক্ষমতাসীন সরকার। বিলটি পাস হলে ল্যাবে তৈরি মাংস ও অন্যান্য কৃত্রিম খাদ্যও নিষিদ্ধ করা হবে। আইন ভাঙলে ৬০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমান করা হতে পারে।

ইতালির কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সেসকো লোলোব্রিগিদা জানিয়েছেন, দেশের কৃষি ও খাদ্যের ঐতিহ্য রক্ষা করাই এই বিলের লক্ষ্য। এই বিলটি সংসদে পাস হলে মেরুদণ্ডী প্রাণীর কোষ বা টিস্যু থেকে কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদন করার অনুমতি দেয়া হবে না।

এদিকে ইতোমধ্যে সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন দেশটির কৃষকরা। তবে পশু অধিকার গ্রুপগুলোর জন্য এটি একটি ধাক্কা। কারণ কার্বন নির্গমন থেকে পরিবেশকে রক্ষা করাসহ প্রাণি হত্যা বন্ধ করতে ল্যাব নির্মিত মাংস উৎপাদনের সমর্থক ছিল এই গোষ্ঠীগুলো।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ডানপন্থী ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য মন্ত্রী ফ্রান্সেসকো লোলোব্রিগিদা। তিনি বলেছেন, ‘আমার মতে ল্যাবে উৎপাদিত খাদ্য পুষ্টিকর নয়। এগুলো আমাদের জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। এগুলো আমাদের ঐতিহ্য সুরক্ষার কোনো গ্যারান্টিও দেয় না।’

ইতালীয় খাদ্যশিল্পকে প্রযুক্তির খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মেলোনির জাতীয়তাবাদী প্রশাসন। এছাড়া দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব মন্ত্রণালয়’ রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত এই বিলে বলা হয়েছে, যে কেউ নতুন আইন লঙ্ঘন করলে তাকে ৬০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। এছাড়া দোষী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত সরকারি তহবিল পাওয়ার অধিকার হারাবে। যেসব কারখানা এই আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বন্ধ করে দেয়া হবে।

সেই প্রাচীনকাল থেকেই মাংস খেতে পছন্দ করেন মানুষ। তবে বেড়ে চলা জনসংখ্যা, পরিবেশের ক্ষতি ও বড় আকারে পশুপালন নিয়ে পরিবেশকর্মীদের উদ্বেগ ও আপত্তি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা ল্যাবে কৃত্রিম মাংস তৈরি করে নতুন সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন।

ডেইলি মেইলের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ল্যাবে তৈরি মাংস রেঁস্তোরায় আসবে আগামী ২০২৮ সাল নাগাদ। ল্যাবে বানানো মাংসের প্রচারের জন্য এরই মধ্যে আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকটি বড় বড় রেস্টুরেন্টের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে গেছে।

এই চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্সিস মলম্যান ও স্প্যানিয়ার্ড জোসে আন্দ্রেসের মতো রেস্টুরেন্টের মেনুতে রাখা হবে ল্যাবে তৈরি মাংস। সিঙ্গাপুর এ ধরনের মাংস খুচরা বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। তবে এবার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদনের পর এখন যুক্তরাষ্ট্রেও এটি বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে সফলতা আনতে উৎপাদকদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আসল মাংসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাজারে টিকে থাকাটাই ল্যাবের মাংসের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *